• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫২ অপরাহ্ন

প্রাপ্ত বয়স্কের জামিনের স্পষ্ট বিধান নেই শিশু আইনে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিদ্যমান শিশু আইনে প্রাপ্তবয়ষ্ক অভিযুক্তের জামিনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বিধান নেই বলে অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, এই আইনে দায়েরকৃত মামলা তদন্তনাধীন থাকাবস্থায় প্রাপ্তবয়ষ্ক অভিযুক্তের জামিন আবেদন শুনানির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ও ৪৯৭ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে। ফলে তদন্তকালীন সময়ে শিশু ব্যতীত এ ধরনের অভিযুক্তের জামিন শুনানির এখতিয়ার শিশু আদালতের নেই।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি মানব সেতুতে হাঁটার অপরাধে করা মামলায় চাঁদপুর হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের জামিন বাতিলের রায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চ এ অভিমত প্রদান করেছে।
গত ৩০ জানুয়ারি হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দিয়ে গড়া মানবসেতুতে হাঁটেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় হাইমচর থানায় মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় ওই চেয়ারম্যান গত ২৯ মার্চ চাঁদপুরের শিশু আদালতে গিয়ে জামিন নেন। এই জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন বাদী আব্দুল কাদের গাজী। গত ১৯ জুলাই উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেওয়া জামিন আদেশ বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। জামিন বাতিলের এই রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত রায়ের পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু তিনি জামিন পাননি। পরে শিশু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। হাইকোর্ট মনে করে শিশু আদালতের বিচারক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্রাপ্তবয়ষ্ক অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে তা মঞ্জুর করেন। জামিন মঞ্জুর করে শিশু আদালতের বিচারক ওই আইনের গুরুতর ভুল প্রয়োগ করেছেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, আমরা (বিচারপতিদ্বয়) শিশু আদালতের বিচারকের কাছে জামিন প্রদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। ব্যাখ্যায় শিশু আদালতের বিচারক বলেছেন, শিশু আইনের ৫২(৪)(৫), ১৭(১), ১৮(ক) ও ৪২(১) ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারার বিধান মিলিয়ে পড়ে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে তদন্ত পর্যায়ে এই আইনের অধীন দায়েরকৃত মামলায় প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামির জামিন শুনানির এখতিয়ার কেবলমাত্র শিশু আদালতের, অন্য কোনো আদালতের নয়।
শিশু আদালতের বিচারকের এই ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, শিশু আইনের ১৭ ধারা পড়লে এটাই প্রতীয়মান হয় যে এই ধারাটি শুধুমাত্র ‘বিচারের’ সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাত্ ধারাটি শিশু আদালতের বিচার পরিচালনার এখতিয়ারকে নিশ্চিত করেছে। ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, “আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকিলে, যে কোনো আইনের অধীনেই হউক না কেন, উক্ত মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকিবে।” অর্থাত্ শিশু আদালতের বিচারক আইনের এই ধারাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়া শিশু আইনের ২৯ ধারায় শিশুর জামিনের মুক্তি প্রদানের বিষয়ে বলা হয়েছে। অতএব আমাদের বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে শিশু আদালতের বিচারক বেআইনিভাবে ওই চেয়ারম্যানের জামিন মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট মনে করে শিশুর অধিকার সুরক্ষার জন্যই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিশু আদালতের বিচারক আইনের এই মূল উদ্দেশ্যও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এর আগে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত পৃথক চারটি মামলার প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রংপুরের শিশু আদালত। আসামি প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পরেও জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করায় শিশু আদালতের বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট। ব্যাখ্যায় শিশু আদালতের বিচারকরা বলেছিলেন, শিশু আইনে অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে তার সাজার বিধান এই আইনে সন্নিবেশিত করা হয়নি। ফলে প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির সাজা বা বিচার কোনো আদালতে হবে সেই অস্পষ্টতা নিরসনে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।
এরপর গত বছরের ১৪ আগষ্ট বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ শিশু আইনের অস্পষ্টতা নিরসনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে। এরপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ অস্পষ্টতা নিরসনে শিশু আইনের সংশোধনীর খসড়া হাইকোর্টে পাঠায়। ওই খসড়ায় বলা হয়, শিশু আইনে অপরাধী প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। আর শাস্তি হবে প্রচলিত আইনে। সংশোধনীতে শিশু আইনের ১৫ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়, তদন্তকালে শিশুর জন্য শিশু আইন এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিসহ অন্যান্য প্রযোজ্য আইনের বিধান অনুসরণ করতে হবে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page