• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন

সুচির নোবেল পদক কেড়ে নেয়ার সুযোগ কতটুকু

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পদক পেয়েছিলেন মিয়ানমারের ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির নেতা (এনএলডি) এবং বতর্মানে জান্তা সরকারের বিশেষ উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচি। দীর্ঘ কারাবাস শেষে তিনি এখন মুক্ত। তিনি বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। অথচ তার সামনেই দেশটির রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালাচ্ছে নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ। মিয়ানমার সরকারের এ নির্যাতন-নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হওয়া অভিযানে সম্প্রতি ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছে। সাগরে ও নদীতে ভাসছে রোহিঙ্গা শিশুদের লাশ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে হাজার হাজার বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সুচি কিছু বলছেন না। এ ব্যাপারে সুচির কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেই। এমন অবস্থায় সুচির নোবেল পুরস্কারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন সুচির নোবেল ফিরিয়ে নেয়া হবে না এমন প্রশ্নও উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষোভকারীরা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি সুচির নোবেল ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও জানাচ্ছেন।

সুচির পদক কেড়ে নেয়া হবে কিনা এ নিয়েও তর্ক হচ্ছে। আদৌ কেড়ে কি নেয়া হবে? কেড়ে নেয়া কি সম্ভব? এমন সব প্রশ্ন নিয়েই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিক্ষোভকারীরা সুচির পদক কেড়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জাকার্তায় বিক্ষোভকারীদের একজন ফরিদা বলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চলার সময় সারা বিশ্ব নীরব ভূমিকায় আছে।’ রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে সুচির নীরবতা নিয়ে অন্য নোবেলজয়ীরাও সমালোচনা করেছেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সুচির ভূমিকার সমালোচনা করেন। এক টুইটার বার্তায় মালালা লিখেছেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমি এই মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আসছি। আমি এখনও অপেক্ষা করছি নোবেলজয়ী সুচি একই কাজ করবেন। সারা বিশ্ব অপেক্ষা করছে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানরাও অপেক্ষা করছে।’

১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন সুচি। কিন্তু সামরিক জান্তা তা মেনে নেয়নি। এরপরই কারাবন্দি হতে হয় সুচিকে। ১৫ বছর টানা বন্দিজীবন কাটান তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বরাবরই নীরব ছিলেন সুচি। এ ব্যাপারে সামরিক জান্তার সঙ্গেই হেঁটেছেন তিনি। জান্তা সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা অবৈধ। ২০১৩ সালের এ বিষয়ে এক বিরল সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর এটা কোনো ‘জাতিগত নিধন’ নয়। নোবেল নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়া সুচিই প্রথম কোনো ব্যক্তি নন। এর আগে মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নোবেল পদক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের নেতা শিমন পেরেস ও আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে নোবেল পেয়েছিলেন ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত। তবে নোবেল কমিটিতে থাকাকালে ক্রিস্টিয়ানসন নামে এক সদস্য তা মেনে নিতে পারেননি। তার দৃষ্টিতে ইয়াসির আরাফাত ছিলেন একজন ‘সন্ত্রাসী’।
১৯৯১ সালে সুচিকে নোবেল দেয়ার সময় নোবেল কমিটিতে ছিলেন নরওয়ের রাজনীতিক গুনার স্টলসেট। তিনি বলেন, ‘নোবেল কমিটি প্রদত্ত পুরস্কার কখনও ফেরত নেয় না। সুচির ক্ষেত্রেও সেটা করা হবে না। তিনি বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার কখনই ফেরত নেয়া হয় না এবং কমিটি নোবেলজয়ীদের প্রতি কোনো নিন্দাজ্ঞাপনও করে না।’ স্টলসেট আরও বলেন, ‘আমরা যে নীতি অনুসরণ করি সেটা শুধু সিদ্ধান্তের অনুসরণ। আর এই নীতি কোনো সাধুর ঘোষণা নয়।’ তিনি বলেন, পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পুরস্কার প্রদানের সঙ্গে সঙ্গেই নোবেল কমিটির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page