• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

ঈদের ছবির লড়াই জমেনি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই রাজধানীর রাস্তার আশপাশের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছিল বড় বড় পোস্টার। শহরের অলিগলিতেও ছিল একই অবস্থা। ফ্লাইওভারের বড় বড় পিলারও ঢেকেছিল নতুন ছবির বিশাল সাইজের পোস্টারে। একই অবস্থা ছিল রাজধানীর বাইরেও। এখন কেবলই স্মৃতি হওয়ার পথে এমন দৃশ্য। ঈদের সপ্তাহ পর ছবির হালহকিকত লিখতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হচ্ছে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ছবিগুলো। বিশেষ করে শাকিব খান-বুবলীর ‘রংবাজ’ ও ‘অহংকার’ ছবি দুটি। কারণ ডিএ তায়েব-পপি-পরীমনির ‘সোনাবন্ধু’ যে দর্শক টানতে হিমশিম খাবে না তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। ঈদের ছবির মধ্যে মান্নান গাজীপুরী পরিচালনা করেন ‘রংবাজ’ ও সাহাদত হোসেন লিটন ‘অহংকার’ ও জাহাঙ্গীর আলম সুমন ‘সোনাবন্ধু’। যদিও রংবাজের বেশিরভাগ কাজ শামীম আহমেদ রনির তত্ত্বাবধানেই হয়েছে। পরিচালক সমিতি সংক্রান্ত জটিলতায় তার নাম পোস্টারে দেখা যায়নি। তিনটি ছবিই সারা দেশের প্রায় ৩১৬টি হলে মুক্তি পেয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়িক সাফল্যের নিশ্চয়তায় শাকিব খানের ছবিই প্রদর্শনে বেশি আগ্রহী থাকেন হল মালিকরা। কিন্তু এ বছর ঈদুল আজহায় শাকিব অভিনীত ‘রংবাজ’ ১৬৩টি হলে ও ১১৮টি হলে ‘অহংকার’ মুক্তি পেলেও দর্শক খরায় ভুগছেন হল মালিকরা। মুক্তির দুই সপ্তাহেও ছবিগুলো সেভাবে দর্শক টানতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন হল মালিকরা। এ প্রসঙ্গে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘জানি না কেন এমন হল। ছবিগুলো দর্শক টানতে পারছে না। কোনো শো’ই এখনও পর্যন্ত হাউসফুল যায়নি। শুধু ইভিনিং শো’তে কিছু দর্শক আসছে। বাকি শোগুলোতে খুবই কম সংখ্যক দর্শক উপস্থিতি হতাশ করছে আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, “শাকিব খানের ছবি তো মুক্তি পেল, তবু দর্শক সেভাবে হলে যাচ্ছেন না। এটা হয়তো নির্মাণের ত্রুটির কারণে। আমার মনে হয়, দর্শক এখন চাকচিক্য চায়। ‘অহংকার’ ও ‘রংবাজ’ ছবির গল্প খুব একটা স্ট্রং নয়। তবুও ‘অহংকার’-এর চেয়ে ‘রংবাজ’ ভালো চলেছে। কারণ এ ছবির শুটিং বাইরে হয়েছে। তো, ছবির সফলতার জন্য একটু দেশের বাইরে নতুন লোকেশন লাগেই আজকাল।” তিনি জানান, ‘অহংকার ছবির দর্শকদের মধ্যে নারী দর্শকের আধিক্য চোখে পড়ছে। অন্যদিকে রংবাজ ছবির প্রতি আগ্রহী হয়েছেন তরুণ ছেলেমেয়েরা।’ এদিকে, শাকিব-বুবলী জুটির বাইরে এবার চিত্রনায়িকা পপি ও পরীমনি অভিনীত লোকগল্পের ছবি ‘সোনাবন্ধু’র প্রতিও দর্শক সুবিচার করেননি। গল্প ভালো হলেও চলচ্চিত্রটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩৫টি হলে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি এখনও প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। হল মালিকরা কিছু শো বন্ধ রেখেছেন দর্শক না থাকায়। তবে, হলে দর্শক না এলেও পরের সপ্তাহেও ছবিগুলো প্রদর্শনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে প্রদর্শক সমিতি। এ প্রসঙ্গে নওশাদ বলেন, ‘কিছুই করার নেই। নতুন কোনো ছবি নেই হাতে। আমরা তো অর্থলগ্নি করে ছবিগুলো হলে এনেছি। টাকাটা তো উঠাতে হবে। ঈদের পর মানুষ শহরে ফিরছে। আশা করি, সব হলেই নতুন কিছু দর্শক যুক্ত হবেন। তাই, এখনও চলচ্চিত্রগুলো হলে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ গেল ঈদুল ফিতরে যৌথ প্রযোজনার দুটি ও দেশীয় প্রযোজনার একটি ছবি মুক্তি পায় দেশের সিনেমা হলগুলোতে। যৌথ প্রযোজনার ‘নবাব’ ও ‘বস টু’র দাপটে হল দখলে ‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্রটি হেরে গেলেও পরবর্তীতে দর্শক আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ঈদের পরও বেশ কয়েক সপ্তাহ নতুন নতুন হলে প্রদর্শিত হয় ছবিটি। তিনটি ছবিতেই আশাতীত সাফল্য পান প্রযোজক ও হল মালিকরা। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশ অনুযায়ী যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত বড়পর্দায় মুক্তি পাবে না যৌথ প্রযোজনার ছবি। তাই ঈদুল আজহায় ছিল দেশীয় প্রযোজনার ‘রংবাজ’, ‘অহংকার’ ও ‘সোনাবন্ধু’- এ তিন ছবির লড়াই। লড়াইতে এগিয়ে ছিল রংবাজ। কিন্তু শিকারি ও নবাব ছবিতে যে শাকিব খানকে দেখতে পেয়েছেন দর্শক, অহংকার কিংবা রংবাজে তার ছিটেফোঁটাও নেই। যেন আগের শাকিব খানকেই আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দর্শকরা পরিচালককেই দায়ী করেছেন। ঈদের ছবিগুলোতে দর্শক চাহিদা একটু বেশিই থাকে। এবারের শাকিব খান অভিনীত দুটি ছবিই বলিউড ও তামিলের কয়েকটি ছবির মিশেলে তৈরি করা নকলের অভিযোগে অভিযুক্ত। নির্মাণেও নেই মুন্সীয়ানা। দর্শকরা এখন যে ধরনের ছবি দেখতে অভ্যস্ত তার কিছুই পাওয়া যায়নি ছবি দুটিতে। এর মধ্যে অহংকার ছবিটি ২০০৫ সালে ভারতের কান্নাড়ার ছবি ‘অটো শঙ্কর’র হুবহু কপি। এ ছবিটি যারা দেখেছেন তারা শাকিব খানের মাঝে উপেন্দ্র আর বুবলীর মাঝে শিল্পা শেঠিকে এলোমেলোভাবে দেখতে পেয়েছেন। তবে শাকিব খান ও বুবলীর অভিনয়ে যথেষ্ট চেষ্টা ছিল। উভয়ই ভালো অভিনয় করেছেন বলে জানিয়েছেন ছবিটি দেখা অনেক দর্শক। আর রংবাজ কপি বা রিমেক যাই বলি না কেন সেটা করা হয়েছে ভারতে ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া ডেভিট ধাওয়ানের ছবি ‘হাম কিসিসে কাম নেহি’। যা পরবর্তীতে কান্নাড়া ভাষায়ও রিমেক করা হয়েছিল। কিন্তু রংবাজ ছবিটি ওই ছবিটির ধারে কাছেও যেতে পারেনি। তবে এ ছবির গানগুলো দারুণ হয়েছে। দর্শকদের কাছে বেশ সাড়াও পেয়েছে। প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে ইউটিউবে গানগুলো ব্যাপক হিটের তালিকায় রয়েছে। শুধু গানগুলোতেই শাকিব খানকে পরিবর্তিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাকি ছবিতে সুপারস্টার শাকিব খান হিসেবে দর্শকরা যেটা চান সেটা দিতে পারেননি নির্মাতারা। অন্য দিকে দর্শক বিবেচনায় ধীর গতির ছবি হচ্ছে সোনাবন্ধু। এ ছবিতে ডিএ তায়েব, পপি ও পরীমনির অভিনয় ভালো হলেও মাত্রারিক্ত গান ছবিটি দর্শকদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছে। ঈদের ছবির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কম থাকার আরেকটি কারণ বলেছেন নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছবি যে একেবারে দর্শক টানেনি তা কিন্তু নয়। দর্শক ছিল, তবে সেটা গত ঈদের চেয়ে কম। তার একটা শক্ত কারণ রয়েছে। এবার দেশের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা চলছে। হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে জীবন চালাচ্ছে। সামান্য ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে বন্যাকবলিত মানুষগুলো। এই পরিস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক খুব একটা থাকার কথাও কিন্তু নয়। আরও একটি কারণ রয়েছে সেটা হচ্ছে, ছবির প্রচারণার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন দর্শকরাই। গত ঈদে যারা শাকিব খানকে দেখেছেন সেভাবে হয়তো এবারের ঈদে দেখতে পারেননি। এতে তারা কিছুটা হলেও আশাহত হয়েছেন। বিষয়টির জন্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ছবিগুলোর ক্ষেত্রে। তবে সব ঈদেই যে ছবি একই রকম ব্যবসা করবে এটাও কিন্তু না। তবে যতদূর জানি ছবিগুলো দর্শক টানার যথেষ্ট উপকরণ ছিল।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page