• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

শিক্ষকের মান দক্ষতা ও আন্তরিকতার দিকে নজর দিতে হবে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

দেশে একদিকে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাজার শিক্ষকের পদ শুন্য থাকছে বছরের পর বছর। এক রিপোর্টে জানা যায় বর্তমানে দেশের প্রাথমিক স্তরে শুন্য পদের সংখ্যা শতকরা ২০ভাগের বেশী। হাজার হাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধানশিক্ষক ছাড়াই। অন্যদিকে বেশীরভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদ মর্যাদার শিক্ষক দূরের কথা শিক্ষকের সব পদ চলছে অস্থায়ী ও খন্ডকালীন ভিত্তিতে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে সব শিক্ষক কর্মরত আছেন তাদের মধ্যে কতজন মানসম্মত শিক্ষক তা’ খুঁজে বের করা কঠিন। শিক্ষার কাঙ্খিত মানোন্নয়নের প্রশ্নে শিক্ষকের মান ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যেখানে কোন প্রকারে প্রয়োজনীয় পদ পূরণ করাই সম্ভব হচ্ছেনা, সেখানে মানসম্মত ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের চাহিদা পুরণ করা কতটা সম্ভব সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এহেন বাস্তবতায় দেশে-বিদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবটিক শিক্ষকের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষকের চাহিদা পূরণের সম্ভাবনার কথা বিবেচিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রা ও বিস্তারের মধ্য দিয়ে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ব্যবধান অনেকটাই কমে যাচ্ছে। এ কারণেই বৃটেনের মত উন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও একই সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে।
বৃটিশ শিক্ষাবিদ ও লেখক স্যার এন্থনি শেলডন বলেছেন, গতানুগতিক চিন্তাভাবনা অপসারিত হয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব সাধিত হবে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন শিক্ষকের স্থান দখল করবে। শিক্ষকরা সেখানে যন্ত্রের তত্বাবধায়কের ভ‚মিকা পালন করবে বলে শেলডন ভবিষ্যদ্বানী করেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শিক্ষকতা শুধু কিছু ভাষার গ্রামার, ফনেটিক্স দক্ষতা, গণিত ও বিজ্ঞানের সূত্র বা ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের এন্থলজি চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাশাপাশি একেকজন আদর্শ শিক্ষককে শিশু ও শিক্ষার্থীদের কাছে একজন অভিভাবকতুল্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে হয়। যিনি নিজের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়তা করার সাথে সাথে চিরন্তন মূল্যবোধের সঞ্চার করতে সচেষ্ট থাকেন। ঘরে পিতা-মাতা, বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক স্নেহ মমতা ও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় হাত ধরাধরি করে চলে। মানুষের সৃজনশীলতা এবং যন্ত্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য এখানেই। কিন্তু আমরা যখন হাজার হাজার বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় ও মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে ব্যর্থ হচ্ছি তখন অন্যান্য সেক্টরের মত শিক্ষাঙ্গনেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবটিক শিক্ষকের কথা বিবেচনায় আসছে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধাও অনেক বেড়েছে। এ তুলনায় শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা কি বেড়েছে? এই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে শিক্ষকের সংকটও তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। শুধুমাত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেই ৬০ হাজারের বেশী পদ খালি রয়েছে। আমাদেরকে যেনতেন প্রকারে শুধু পদ পুরণ করলেই হবেনা। বিশ্বায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হলে শিক্ষাঙ্গণগুলোতে বিশ্বমানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আমরা আশা করিনা, খুব শীঘ্রই রোবটিক শিক্ষক বায়োলজিক্যাল বা মানবিক শিক্ষকের বিকল্প হয়ে উঠবে। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত (এআই)কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের বিস্তৃতি সম্পর্কে বিশদ বর্ননা দিয়েছেন। বিশেষত: শিল্পকারখানায় ক্রত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক হাতের ব্যবহার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস করে তোলছে। যতই দিন যাচ্ছে গৃহস্থালি, শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই কৃত্রিম বুিদ্ধমত্তা সম্পন্ন যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ ও ব্যয়বৃদ্ধির কারণে এক সময় সরকারসহ এ সেক্টরের বেসরকারী বিনিয়োগকারিরা কিছু কিছু বিষয়ে মানসম্মত শিক্ষকের চাহিদা পুরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবটিক শিক্ষকের স্মরনাপন্ন হলে বিষ্ময়ের কিছু থাকবেনা। আমাদের শিক্ষক সমাজ, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী সমাজের প্রতিনিধিদেরকে এখন সত্যিকার অর্থে মানসম্পন্ন ও নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে ভাবতে হবে। আজকে যে সামাজিক অবক্ষয়, শিক্ষিত সমাজের মধ্যে নৈতিক অধ:পতন ও সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম দুর্নীতি গ্রাস করেছে তার পেছনে রয়েছে মানহীন শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্য ও কর্মদক্ষ নাগরিক সৃষ্টির পাশাপাশি নৈতিক, মানবিক ও উন্নত মূল্যবোধ সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আগামী দিনের শিক্ষাঙ্গনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা রোবটিক শিক্ষকের প্রচলণ হলেও তা’ পরিচালনার জন্যও একজন সুযোগ্য শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page