বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার খাতিরে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের চলাচলের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে রাস্তা বন্ধ করিয়া দেওয়ার প্রচলন রহিয়াছে। ইহাতে জনগণের যে ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা হয় না, তাহা নহে। কিন্তু দেশের স্বার্থে তাহারা তাহা মানিয়া নেন। বাংলাদেশও ইহার ব্যতিক্রম নহে। বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এই কথা। কিন্তু এখানেও ইহা লইয়া তেমন কোনো উচ্চবাচ্য হয় না। কখনো কখনো মন্ত্রী-এমপিদের জন্যও রাস্তা ক্লিয়ার করিয়া দেওয়া হয়। যদিও তাহা সীমিত আকারেই হইয়া থাকে, তাহার পরও ইহা লইয়া মাঝেমধ্যেই কথা উঠিতে দেখা যায়।
গত মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুঁশিয়াারি উচ্চারণ করিয়াই বলিয়াছিলেন যে, প্রভাবশালীরা উল্টাপথে গাড়ি চালাইলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হইবে। এখানে প্রভাবশালী বলিতে বোঝানো হয় মন্ত্রী-এমপিদেরই। সম্প্রতি একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর মুখেও শোনা যায় একই ধরনের কথা। তিনি এইজন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন। কিন্তু মন্ত্রী-এমপির চাইতেও অধস্তন লোকেরা যখন একই কাজ করেন এবং রাস্তা দিয়া চলিতে গিয়া ক্ষমতার দাপটে সকল কিছু থামাইয়া দেন, তখন ইহা সংশ্লিষ্ট মহলের গোচরে আসে না কেন? না কি ইহা তাহারা দেখিয়াও না দেখিবার ভান করেন? স্থানীয় পর্যায়ের কোনো কোনো কর্মকর্তার চলাচলের ক্ষেত্রেও অনেক সময় একই অবস্থা দেখিতে পাওয়া যায়। আমাদের প্রশ্ন হইল, যাহা নিজেরা পালন করেন না বা বাস্তব কারণে করা সম্ভব হয় না, তাহার ব্যাপারে অন্যদের বলা হয় কেন? কথায় আছে, ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও’। যে নীতি আমরা নিজেরা মানি না, তাহা যতই ভালো হউক, অন্যকে মানিয়া চলিবার কথা বলিতে পারি না। আমরা আগেও বলিয়াছি যে, এইরূপ নির্দেশ বা কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকারান্তরে মন্ত্রী-এমপিদের ব্যাপারে সমাজে আরো নেতিবাচক ভাবমূর্তিই গড়িয়া তোলা হয়। কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করিলে দেখা যায়, ইহার জন্য তাহারা আসলে দায়ী নহেন। কেননা তাহাদের চলাচল পুলিশ কন্ট্রোল রুম হইতে নিয়ন্ত্রিত হইয়া থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ যখন অন্যের হাতে তখন সস্তা বাহবা নেওয়ার জন্য বা জনসমক্ষে সেইসব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হেয় প্রতিপন্ন করিবার জন্য এমনটি বলা সঙ্গত নহে।
অতএব, যে দেশে যে পরিবেশে থাকা হয়, সেখানে সেভাবেই কথা বলা বা আচরণ করা উচিত। একটি গোষ্ঠী বা কেহ কেহ যখন ইহার বিপরীত আচরণ করেন, তখন তাহাদের উদ্দেশে বলিতে হয়—দয়া করিয়া আয়নায় নিজেদের চেহারাটা একবার দেখুন। অন্যথায় একদিন এমনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হইতে পারে যে, তখন আর মানামানি থাকিবে না। হানাহানিই হইবে সার।