• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা সঙ্কট , কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ নিরাপত্তা পরিষদে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

সপ্তাহ দু’য়েকের ব্যবধানে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে শুক্রবার আবারো বৈঠক বসেছিল জাতিসঙ্ঘ নিরপত্তা পরিষদে। বৈঠকটি নিরাপত্তা পরিষদের আরিয়া ফর্মুলা মিটিং হিসেবে এতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ছাড়াও অংশ নেয় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকটির আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। এসময় সভায় বক্তব্য রাখেন এ্যাডভাইজরি কমিটি অন্য রাখাইন স্টেট-এর চেয়ারম্যান জাতিসঙ্ঘ সাবেক মহাসচিব কফি আনান। বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

কফি আনান তার বক্তব্যে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশকৃত ‘এ্যাডভাইজরি কমিটি অন্য রাখাইন স্টেট’-এর রিপোর্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। রাখাইন প্রদেশের জনগণের স্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও চলমান সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার তার কমিশন প্রণীত রিপোর্টের সুপারিশমালার আশু বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

কফি আনান রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। রোহিঙ্গা উদ্বাত্তদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন, মানবিক সহায়তা ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কফি আনান তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন।

তিনি বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত নিরাপত্তা ও দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা রক্ষা করার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, এই সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান হবে। কফি আনান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারের আন্ত:সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার উপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ রোহিঙ্গা সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত রাখাইন প্রদেশের জনগণের কল্যাণে মিয়ানমার সরকার রাখাইন জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঐক্যমত্য হয়ে কাজ না করে।’

বৈঠক শেষে কফি আনান জাতিসঙ্ঘ সংবাদদাতাদের দেয়া এক ব্রিফিংয়ে জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন যে সঙ্কটের দ্রুত সমাধানে আমাদের যে সব কাজ করতে হবে তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে- সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, যাদের মানবিক সাহায্য প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌছাতে হবে, এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের সম্মানজনকভাবে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘তবে এসব কাজ খুব সহজ নয়।’

নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্যই এ সংকট সমাধানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি এটিকে মানবিক বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে বলেন, “এনাফ ইজ এনাফ। আমরা এটি আর গ্রহণ করতে পারছি না। আমরা মিয়ানমার সিকিউরিটি ফোর্সের এই হীন কাজের নিন্দা জানাই”।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি অনতিবিলম্বে মানবিক সহযোগিতা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি, সহিংসতা বন্ধ, জাতিসঙ্ঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণ প্রবেশাধিকার, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ ও নিশ্চয়তার সাথে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনসহ কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়নের উপর জোর আরোপ করেন। প্রায় একই ভাষায় কথা বলে নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। তারা বাস্তু-চ্যুত ও অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক সাহায্য প্রদান করায় বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বইন মোমেন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক এই যে মিয়ানমার সরকারের দেয়া বিবৃতি আর রাখাইন প্রদেশের প্রকৃত পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। ২৫ আগস্টের পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে উদ্বাস্তুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখে।’

গত মাসে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ভাষণে মিয়ানমার পরিস্থিতির সমাধানে যে ৫টি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয় রাষ্ট্রদূত তার বক্তৃতায় তা তুলে ধরে বলেন, ‘সহিংসতা ও একটি জাতিকে নির্মূলের প্রক্রিয়া বন্ধ, মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট ফান্ডিং মিশন প্রেরণ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেফ জোন তৈরি, জোরপূর্বক উচ্ছেদকৃত মানুষদের নিজ ভূমিতে স্থায়ী প্রত্যাবর্তন এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।’

রাষ্ট্রদূত মোমেন আরো বলেন, ‌মিয়ানমারের সামরিক জান্তার উপর্যুপরি উস্কানি এবং বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন সত্ত্বেও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতা প্রদর্শন ও মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন , দুদেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরো বিশদ আলোচনার প্রয়োজন হবে। এ ধরনের কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের অংশগ্রহণ ও তদারকি ছাড়া মিয়ানমারের সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও অর্থপূর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল সমস্যা সমাধান করা কঠিন হবে।
এছাড়া বৈঠকে বক্তব্য রাখেন অফিস অব দ্যা হাই কমিশন অব হিউম্যান রাইটস, অফিস ফর দ্যা কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়াস, ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি, ওআইসি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার পরিস্থিতির উপর তিনবার আলোচনায় বসে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page