• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন

৭ই মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৭

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই ভাষনের রাজনৈতিক দিক নির্দেশনার পথ ধরেই ৯ মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ১৮ মিনিটের ভাষনটি স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ইউনেস্কোর প্রামান্য বিশ্বঐতিহ্যের রেজিস্ট্রারে অর্ন্তভুক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাষন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হল। আমাদের জাতীয় ঐতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই দলিলের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের ও আনন্দের বিষয়। গত ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩৯তম সাধারণ অধিবেশনের আগে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড(এমওডব্লিউ) প্রকল্পের এডভাইজরি কমিটির দ্বিবার্ষিক বৈঠক শেষে গত সোমবার ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বঙ্গবন্ধুর ভাষণসহ ৭৮টি দলিলকে ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির তথ্য প্রকাশ করেন। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
৭ই মার্চের ভাষণের উপসংহারে বঙ্গবন্ধু সমবেত লাখো জনতার সামনে আঙুল উঁচিয়ে ঘোষনা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ভাষণই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা কিনা এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক বিতর্ক থাকলেও মূলত: এই ভাষণের মধ্য দিয়েই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার চুড়ান্ত বীজমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। স্বাধীনতার পর এই ভাষণকে ঘিরে অনেক কবিতা ও গান রচিত হয়। ইউনেস্কোর মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভাষনটি নিয়ে নতুন উদ্দীপনা ও মূল্যায়ণ শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের অনন্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত ছিল, এখন তা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, নিজের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই বঙ্গবন্ধু এই ভাষণটি দিয়েছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে এতদিন আমরা বিশ্বাস করতাম, আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই ভাষণ একদিন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবেই। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি আমাদের সেই বিশ্বাস ও প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৭ই মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর আমরা ইতিমধ্যেই ৪৬ বছর পেরিয়ে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্বের প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও যে লক্ষ্যে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতার সেই লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতন্ত্র ও সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। আর মাত্র ৩ বছর পর ২০২১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন করতে চলেছি তখনো আমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে বিরাজ করছে একটি অস্বাভাবিক অনিশ্চয়তা। গণতন্ত্র এখনো অধরা। এখনো দেশের অর্ধেকের বেশী মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। দুর্নীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক অনাচার-অবক্ষয় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, আওয়ামীলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে প্রায় এক দশক ধরে দেশ পরিচালিত হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়ন আকাংখা ও প্রত্যাশার মধ্যেই সীমিত হয়ে আছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের বাস্তবায়ন নিয়ে দেশের মানুষ এখনো সীমাহীন হতাশায় নিমজ্জিত। অর্থনীতিতে লুণ্ঠন, দুর্বৃত্তায়ণ বন্ধ করার পাশাপাশি রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতিকে প্রত্যাশার নতুন দিগন্তে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে যেমন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের স্বীকৃতি রয়েছে, তেমনি দেশ ও জাতির আজকের অবস্থার জন্যও তাদের দায় রয়েছে। জাতীয় সংকট উত্তরণ ও স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী হিসেবে আওয়ামীলীগ এবং প্রধানমন্ত্রীকে আরও মনোযোগি আরও দায়িত্বশীল ভ’মিকা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আমরা ইউনেস্কোকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page