• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
হামলা পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা আপাতত শেষ! বুশরা বিবিকে টয়লেট ক্লিনার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরান খানের ৭ দিন ছুটি বাড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরাজিত হয়েও ফুলের মালা নিপুণের গলায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা বিশ্বব্যাংকের, বাংলাদেশ পাবে কত ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নির্বিশেষে সম-অধিকার দিয়েছে সংবিধান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালকের প্রার্থীতা প্রত্যাহারে টেলিফোন নির্দেশ নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরার আহ্বান রাষ্ট্রপতির দেশে হিট অ্যালার্ট জারি, শঙ্কায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর দাবি ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

অসমতল ভূমির পাঠশালা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটা মানুষও না খেয়ে নেই। দাম যেমন তেমন এখন আর দুর্ভিক্ষ হয় না। দেশি মাছ হারিয়ে গেলেও হাইব্রিড মাছ পাওয়া যাচ্ছে দেদারসে। মেহমান এলে সাধের পালন করা মুরগি উঠোন থেকে ধরে এনে জবাই করতে হয় না। অল্প টাকায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পোল্টি। যে ক্ষেতে আগে একটন ধান পেতো কৃষক, সেখানে হচ্ছে এখন ফলছে ৫-৬ টন। আর এই সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের কারণে। আর অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে ১১ বছর ধরে। তাদের নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন—

 

৫০ একর জায়গাজুড়ে

 

সিলেটের লালচে মাটির গুণগতমান দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন। আবার বৃহত্তর সিলেটে রয়েছে হাজার হাজার একর অনাবাদি উঁচু-নিচু পাহাড়ি অসমতল ভূমি। আছে হাওর নামের বিস্তীর্ণ জলাশয়। টিলাঘেরা সবুজ পরিবেশের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। অপার সম্ভাবনাময় এসব প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে গবেষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য এরইমধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদ সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। মাত্র ৫০ একর জায়গা নিয়ে সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ থেকে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর দেশের চতুর্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আনন্দের খবর এই যে, সম্প্রতি দশ পেরিয়ে এগারো বছরে পদার্পণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

 

এখন পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ এবং মত্স্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েট হিসেবে ৬টি করে ১২টি ব্যাচ বের হয়েছে। এদিকে, ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স অনুষদ থেকে এরইমধ্যে ১৮টি ব্যাচ বেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে বেরোলো ৩টি ব্যাচ এবং কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ থেকে আরও দুটি ব্যাচ। বিসিএস পরীক্ষাসহ দেশ-বিদেশে আমাদের গ্রাজুয়েটদের ছড়াছড়ি। ভাবতে ভালোই লাগছে এরা সবাই এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করছে এবং বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাদের একাডেমিক জ্ঞানটুকু এবার মাঠে কাজে লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্কের কারণেই তারা সফল হয়েছেন।

 

ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা

 

সবুজে ঘেরা, ছোট ছোট টিলা ক্যাম্পাসের পরিবেশকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। আয়তনে ছোট হলেও এর রূপ সৌন্দর্য আমাদের হূদয়ে আলাদা একটা টান ও ভালোবাসা জন্ম দেয়। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে দেখেছি কিভাবে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটি। সিকৃবির শিক্ষার্থীরা এখানকার বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মননশীল চিন্তা করতে সাহায্য করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে আর আড্ডা হবে না সেটা কি হয়! কেউ কেউ আবার ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দেয় আড্ডা। এর মধ্যে ফুচকা চত্ত্বর, জালাল মামার চায়ের দোকান, ট্যাংকির তলা, কাঁঠাল তলা, ক্যাফেটেরিয়া, ইকো পার্ক ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।

 

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অভিযোগ এখানে কোনো গবেষণা হয় না। মাঠ নেই, সরঞ্জাম নেই। তবু কিছু সাফল্য বেশ আলোচিত। এর মধ্যে একটি হলো গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ। টমেটো বা সিম এখন আর শুধুমাত্র শীতকালে চাষ হবে না। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. শহীদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সিমের নতুন দুটি জাত অনুমোদন পেয়েছে। প্রোটিনসমৃদ্ধ এই জাতগুলোর তিনি নাম দিয়েছেন সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২। এই জাত সিলেট অঞ্চলে বছরব্যাপী প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের আরেক বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম। সুগন্ধী আগর নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেটের স্থানীয় জাতগুলো কিভাবে উন্নত করা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস গবেষণা করছেন।

 

পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেননি

 

এত প্রাপ্তির মাঝেও কিছু না পাওয়ার কথা রয়ে গেছে, যেমন—ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গাটিতে এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেননি গবেষকরা। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেট শহরে যাতায়াতের জন্য বাস নিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৩টি বাস। বাঁদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। ফলে যারা সিলেট শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন তারা পড়েন চরম বিপাকে। ডাইনিংয়ের খাবার নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। নেই ভালো খেলার মাঠ, অডিটোরিয়ামটিও ছোট। সবকিছু ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি হয়ে উঠেছে গবেষণার জন্য মাঠ। অবশ্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃক্যাম্পাস হিসেবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ-তামাবিল বাইপাস সড়কসংলগ্ন খাদিম নগর এলাকায় ১২.৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। দু-বছর আগে সিলেট জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিয়েছিল। মাত্র ৫০ একর জমি নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যাত্রা করে, যার বেশিরভাগ টিলা ও জঙ্গল বেষ্টিত। নতুন জায়গাটি প্রাপ্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ১১ বছরে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের মান নিয়ে সবাই গর্ব করছে। নবান্নকে সামনে রেখে ছায়া সুনিবিড়, সবুজ টিলায় ঘেরা সুন্দর ক্যাম্পাসের জন্মদিনে প্রতিটি ধূলিকণায় যেন রঙ লেগেছে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page