• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭

সাব্বির আহমেদ, সবে মাত্র বিবিএ পাস করে চাকরিতে ঢুকেছেন। নতুন চাকরি সব কিছুই নতুন মাঝে ঘটল বিপত্তি চাকরির দাতারা জরুরী প্রয়োজনে তাকে ট্র্যান্সফার করল ঢাকার বাইরে। নিতান্ত নিরুপায় হয়ে তাকে সেই দূরে যেতেই হলো। নতুন বাসা কর্মস্থলের পাশে নিলেন কিন্তু বাসায় কোন আসবাব পত্র নেই। নতুন বাসার জন্য একটি ফ্রিজ , টিভি খুব দরকার। কিন্তু নতুন চাকরি হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই কি করা। শেষ পর্যন্ত বন্ধু সুজনের বুদ্ধিতে ক্রেডিট কার্ড নিলেন। আর এই ক্রেডিট কার্ডই ছিল তার প্রয়োজনের সময় সম্বল অথবা ধরেন ব্যাগে কত টাকা নিয়ে আপনি বের হবেন, পথে তো নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়। এর সহজ সমাধান দিতে পারে ক্রেডিট কার্ড। এটি ব্যবহারের ফলে সব সময় টাকা বহন করার প্রয়োজন নেই। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে টানাপোড়েনের সুযোগ নিয়েই ক্রেডিট কার্ডের যাত্রা শুরু। আগামী দিনের চাহিদাকে বর্তমানে মেটানোর এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে এই কার্ড। ঋণ সুবিধায় ব্যক্তিপর্যায়ে কেনাকাটা ও নগদ অর্থের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চাহিদা বাড়ছে সেবাটির। দৈনন্দিন বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে এখন আর নগদ টাকা নয়; কার্ডের ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন গ্রাহকরা। আর তাই কেনাকাটা, ব্যাংক থেকে টাকা তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিদিনই বাড়ছে কার্ডের ব্যাবহার। এমনকি বিদেশেও এ দেশের মানুষ এখন কার্ড ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছেন। বেড়ানো কিংবা চিকিৎসা অথবা ব্যবসার প্রয়োজন- যে কারণেই বিদেশ যাওয়া হোক না কেন, পকেটে করে বিদেশী মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার চেয়ে কার্ডেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা। তাই এখনকার সময়ে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। বর্তমান সময়ে নগদ টাকা ও চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি নিরাপদ। আপনার কার্ডটির ভুলত্রুটি বা জালিয়াতি হলে কিংবা চুরি হলে আপনি আপনার অর্থ ফেরত পাবেন। ধরুন, আপনার কার্ডটি চুরি হয়ে গেল। কেউ টাকা তুলে নিল। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ করলে কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পুরো অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। যথাযথ প্রমাণ দিয়ে দ্রুত অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কার্ডের পিন নম্বরটি মনে রাখতে হবে। নম্বরটি লিখে নিজের কাছে কখনও রাখা যাবে না। শুরুর কথা বলতে গেলে বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ (বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংক প্রথম ক্রেডিট কার্ড সেবা নিয়ে আসে। কাছাকাছি সময়ে বেসরকারী খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক ও তৎকালীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভানিক বাংলাদেশ (বর্তমানে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স) এ সেবা চালু করে। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোও এ সেবায় মনোযোগী হয়। বর্তমানে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টি ব্যাংকে এ সেবা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে দেশের বাইরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টি বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। চালুর প্রায় দুই যুগ পর গত মে মাসে গ্রাহকদের স্বার্থে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করা হয়। পরবর্তীতে তা আবার সংশোধন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধিত নীতিমালায় বাস্তবায়নের সময় ১ জানুয়ারি ২০১৮ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নীতিমালায় সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি, পরিশোধের সময়সীমাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুনে দেশে ক্রেডিট কার্ড ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৮টি। আগের বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ১ হাজার ৬২৪। অর্থাৎ এক বছরে ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪টি। এসব কার্ডের মাধ্যমে গত জুনে লেনদেন হয়েছে ৮৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এটিএম থেকে উত্তোলন হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা, পিওএসে লেনদেন হয়েছে ৬০৯ কোটি টাকা এবং ই-কমার্সে কেনাকাটা করা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে এটিএম থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা, পিওএসে লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা এবং ই-কমার্সে কেনাকাটা করা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকার। গত জুন পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

যারা পাবেন-ক. ১৮ বছরের উর্ধে যে কেউ, খ.জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে, গ. মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার বেশি, ঘ. কমপক্ষে ৬ মাস ব্যাংক হিসেবে বেতন পেতে হবে, ঙ. ব্যবসায়ী হলে নির্দিষ্ট আয়ের ব্যাংক তথ্য থাকতে হবে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্কতা- ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেশের ভেতরে বা দেশের বাইরে যেকোন জায়গায় কেনাকাটা করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে: কেনাকাটার পর কার্ডটি যেন আপনার সামনেই মেশিন ব্যবহার করা হয়। স্লিপে সই করার আগে দেখে নিতে হবে আপনি যে পরিমাণ টাকার কেনাকাটা করেছেন, স্লিপে সেই পরিমাণ টাকাই উল্লেখ রয়েছে কিনা। অন্তত মাসিক বিল আসার আগ পর্যন্ত আপনার স্লিপটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় যেসব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে

ক্রেডিট কার্ড হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পেছনের নির্ধারিত অংশে স্বাক্ষর করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ক্রেডিট কার্ড অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। আপনার ক্রেডিট কার্ডের ব্যক্তিগত গোপন নম্বর কাউকে জানাবেন না। মনে রাখতে হবে, এই গোপন নম্বরটি নিরাপদ রাখার দায়িত্ব আপনারই। বিভিন্ন কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নানা রকম কার্ডের সঙ্গে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনার প্রাপ্য সুবিধাগুলো কার্ড ব্যবহারের আগে ভালভাবে জেনে নিন। আপনার কার্ডের সুদের হার, বিভিন্ন রকম ফি, ন্যূনতম মাসিক প্রদেয় ইত্যাদি বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে নিন।

ক্রেডিট কার্ড যদি হারিয়ে যায়-

কার্ড যদি হারিয়ে যায়, চুরি বা ছিনতাই হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, গোপন নম্বর বা পিন ছাড়া এটিএম বুথ থেকে কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা যায় না। কিন্তু কেনাকাটা করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কার্ড হারিয়ে যাওয়ার এক-দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি পরে কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয় এবং এর মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার হয়। মনে রাখতে হবে, কার্ড হারিয়ে গেছে এই তথ্য কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা কার্ডটি বন্ধ করে দেয়। আর এই তথ্য কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান না জানা পর্যন্ত কার্ডে যা লেনদেন হয়, তার দায়দায়িত্ব গ্রাহককে নিতে হয়।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page