• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
হামলা পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা আপাতত শেষ! বুশরা বিবিকে টয়লেট ক্লিনার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরান খানের ৭ দিন ছুটি বাড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরাজিত হয়েও ফুলের মালা নিপুণের গলায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড ঘোষণা বিশ্বব্যাংকের, বাংলাদেশ পাবে কত ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নির্বিশেষে সম-অধিকার দিয়েছে সংবিধান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালকের প্রার্থীতা প্রত্যাহারে টেলিফোন নির্দেশ নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরার আহ্বান রাষ্ট্রপতির দেশে হিট অ্যালার্ট জারি, শঙ্কায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর দাবি ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

চলচ্চিত্র নেপথ্য কাহিনি :স্ট্যানলি কুব্রিকের ‘স্পার্টাকাস’

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

ষোল শতক থেকে ইউরোপে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হতে শুরু করে। অনেক দেশে বিংশ শতক পর্যন্ত এই অমানবিক প্রথা টিকে ছিল। অথচ আজ থেকে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে একজন দাসপ্রথার বিলুপ্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। রোমের সেই বিপ্লবী ‘দাস-নেতা’র নাম স্পার্টাকাস।

স্পার্টাকাসের ছোটবেলা সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। সম্ভবত তিনি জাতিতে থ্রাসিয়ান ছিলেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, দাসদের বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন গ্ল্যাডিয়েটর। এক অমানবিক নিষ্ঠুর খেলা—গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই। খাঁচার মধ্যে দুজন গ্ল্যাডিয়েটরকে নামিয়ে দেওয়া হতো। প্রায়ই খেলা চলত কোনো একজন মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত এটাই ছিল রোমের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।

স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাসদের ঐ বিপ্লবটাও ঘটে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকেই। শুরুটা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৩ সালে। রোমের কাপুয়ায় গ্ল্যাডিয়েটরদের একটা প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। ওখান থেকে রোমের ধনী লোকেরা পছন্দ করে করে প্রশিক্ষিত গ্ল্যাডিয়েটরদের কিনে নিয়ে যেত। লড়াইয়ের জন্য। কাপুয়ার সেই প্রশিক্ষণ শিবিরেই বিপ্লবের শুরু। প্রায় ৭০ জন দাস-গ্ল্যাডিয়েটর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের নেতৃত্ব দেন স্পার্টাকাস।

স্পার্টাকাস কেবল এতেই সন্তুষ্ট হননি। স্বপ্ন দেখেছিলেন, দাসদের মুক্ত-স্বাধীন জীবন উপহার দেবেন। দলবল নিয়ে তিনি যে অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানেই দলে দলে দাস এসে তাঁর দলে যোগ দিচ্ছিলেন। রোম প্রথমে তাঁদের ধরার জন্য ছোট একটা দল পাঠায়। স্পার্টাকাসের দলের কাছে সে দল পরাজিত হয়। ফলে স্পার্টাকাসের দলে দাসদের যোগদানও হুহু করে বাড়তে থাকে। দুই বছরের মধ্যেই তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়ায় সোয়া লাখে। রোমান বাহিনীর সঙ্গে আরো কয়েকবার লড়াইয়ে প্রতিবারই তাদের হারিয়ে দেন স্পার্টাকাস।

স্পার্টাকাসের ইচ্ছা ছিল সাগর পাড়ি দিয়ে সিসিলিতে চলে যাওয়া। তাহলেই কেবল তাঁর অনুসারীরা সত্যিকারের মুক্ত জীবনের স্বাদ পাবে। সেজন্য তিনি সিলিসিয়ান জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতাও করেছিলেন। তাদের পাঁচ শ জাহাজের বন্দোবস্ত করার কথা ছিল। কিন্তু দাসদের এই অগ্রযাত্রা ঠেকাতে রোমান নেতৃত্ব বেছে নিল সব ধরনের পন্থা। একদিকে তারা জলদস্যুদের হাত করল। সেইসঙ্গে ম্যাগনাস এবং লুকালাসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর দুটো দল পাঠিয়ে দিল দুই পথে, যাতে স্পার্টাকাসকে তার বাহিনী নিয়ে আবার রোমের পথেই ফিরে আসতে হয়। আর সেখানে ক্র্যাসাসের নেতৃত্বে অপেক্ষায় ছিল রোমের মূল সেনাবাহিনী।

খ্রিস্টপূর্ব ৭১ সালে সংঘটিত ক্র্যাসাসের সঙ্গে স্পার্টাকাসের এই যুদ্ধটা পরিচিত তৃতীয় সার্ভিলের যুদ্ধ নামে। সেখানে স্পার্টাকাসের বিশাল দাসবাহিনী মুখোমুখি হয় ক্র্যাসাসের ৪০ হাজার সুপ্রশিক্ষিত রোমান সেনার। শুধু তাই না, পেছন থেকে ম্যাগনাস এবং লুকালাসের বাহিনীও আক্রমণ করে তাদের। এই যুদ্ধে পরাজিত হন স্পার্টাকাস। যুদ্ধশেষে তাঁর বাহিনীর প্রায় ৬ হাজার দাসসেনা রোমানদের হাতে ধরা পড়ে। তাঁদেরকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রোম পর্যন্ত পথের দুই ধারে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়।

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে প্রথম এই যুদ্ধের নায়ককে কেন্দ্রে রেখে, এই যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে প্রথম উপন্যাস রচনা করেন মার্কিন লেখক হাওয়ার্ড ফাস্ট। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটিকে ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে স্পার্টাকাসকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন কার্ক ডগলাস। তার চিত্রনাট্য রচনার জন্য প্রথমে হাওয়ার্ড ফাস্টকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও, পরে ডাল্টন ট্রাম্বো সে কাজ করেন। আর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্ট্যানলি কুব্রিককে। ফলাফল—১৯৬০ সালে মুক্তি পায় কুব্রিকের ক্যারিয়ারের অন্যতম মাস্টারপিস, সোয়া তিন ঘণ্টার ‘স্পার্টাকাস’।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page