• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন

পোশাক কারখানার নিরাপত্তা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৭

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার সংস্কার তদারকির দায়িত্বে থাকা ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড প্রায় সোয়া চার বত্সরের কার্যক্রম শেষে গত শুক্রবার একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছে। তাহাতে বলা হইয়াছে যে, প্রায় দেড় হাজার কারখানার মধ্যে ৯৪৬টি কারখানায় আগুন শনাক্তের ব্যবস্থা নাই। মাত্র ৩১ শতাংশ কারখানায় আগুন চিহ্নিত করা ও ফায়ার অ্যালার্মের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকিলেও বাকি ৬৯ শতাংশ কারখানার ক্ষেত্রে এখনও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব রহিয়াছে। অবশ্য অ্যাকর্ডের এই প্রতিবেদনের সহিত আমাদের পোশাক কারখানার মালিকগণ একমত নহেন। তাহাদের মতে, ৯০ শতাংশ কারখানায় আগুন চিহ্নিত করিবার যন্ত্রপাতি বসানো হইয়াছে। কিন্তু পুরোদমে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অ্যাকর্ডের সনদপত্র পাওয়া যায় নাই। তবে আগামী মে নাগাদ অ্যাকর্ডের সময়সীমার মধ্যে সব ঠিক হইয়া যাইবে বলিয়া তাহারা মনে করেন।

২০১২ সালে বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিহাসে সবচাইতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তাজরিন ফ্যাশনে। ঠিক পরের বত্সরেই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বড় কারখানা দুর্ঘটনাটি ঘটে সাভারে রানা প্লাজা ধসের মাধ্যমে। বস্তুত তখনই চাপ আসিতে থাকে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায় হইতে। ডিজনিসহ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড বাংলাদেশ হইতে পোশাক না ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এ প্রেক্ষাপটেই নানা আপত্তি সত্ত্বেও সেদিন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠনের প্রস্তাবে সম্মতি দিতে হইয়াছিল। তাহাদের উদ্যোগে শুরু হয় অগ্নি নিরাপত্তা, স্থাপনা নিরাপত্তা ও বিদ্যুত্ বিষয়ক নিরাপত্তা নিয়া চুলচেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চাপানো হয় বাড়তি কিছু শর্তাবলীও। এদিকে উত্পাদন খরচ বাড়িলেও পোশাকের দাম বাড়ে নাই সেই অনুপাতে। বরং বিপদের সুযোগ নিয়া দরকষাকষি করিয়াছেন অনেকে। তাহার পরও আজ আমাদের পোশাক শিল্প সেই বিরূপ পরিস্থিতি কাটাইয়া উঠিতে সক্ষম হইয়াছে। অগ্নিঝুঁকি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ফলে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে অগ্নিদুর্ঘটনা ৯০ শতাংশ হ্রাস পায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন সন্তোষজনক। আশার কথা হইল, অ্যাকর্ডের প্রতিবেদনে আমাদের কোনো কোনো ব্যবস্থাপনায় সন্তোষও প্রকাশ করা হইয়াছে। আগুন লাগিলে শ্রমিকদের দ্রুত বাহির হইয়া আসিবার জন্য ৯৪ শতাংশ কারখানায় কলাপসিবল গেট সরাইয়া নেওয়া এবং শ্রমিকদের বাহির হইয়া আসিবার পথে পর্যাপ্ত আলো থাকিবার ব্যবস্থা করা তন্মধ্যে অন্যতম। বস্তুত অ্যাকর্ডের এই প্রতিবেদনে তাহাদের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটাও বিচিত্র নহে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী সাফ জানাইয়া দিয়াছেন যে, ২০১৮ সালের পর তাহারা আর থাকিতেছে না। তথাপি আমরা বলিতে চাই, শুধু অ্যাকর্ডের আরোপিত শর্তের কারণে নহে, বরং আমাদের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া নিজেদের স্বার্থেই প্রতিটি কারখানায় নিরাপত্তার বিধানকে অগ্রাধিকার দিতে হইবে। আগুন চিহ্নিত করিবার ব্যবস্থা যেমন সেন্ট্রাল ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম যথাযথভাবে স্থাপন ও সক্রিয় করিতে হইবে। ইহাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলি যথাসময়ে মেরামত ও সংস্কার করিতে হইবে। এইভাবে একদিকে পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করিতে হইবে, অন্যদিকে পোশাকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যাপারেও দরকষাকষি অব্যাহত রাখিতে হইবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page