• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

খুশি নন ভিজিডি ভিজিএফ কার্ডের সুবিধাবঞ্চিতরা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

রংপুর প্রতিনিধি॥
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের দম ফেলার ফুরসত না থাকলেও ভোটে খুশি নয় ভিজিডি-ভিজিএফ সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো। তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) থাকাকালে দুস্থ এ পরিবারগুলো ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ডসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কষ্ট হলেও খেয়েপরে বেঁচে ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বাড়তি সুবিধা তো নেই-ই, বরং প্রাপ্ত সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে তারা। রংপুর সদর উপজেলাধীন সাত ইউনিয়নেই এমন পরিবার রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার। তাদের এই ক্ষোভ ভোটে, বিশেষ করে বর্তমান কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের জেতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছে।

১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ছিল রংপুর পৌরসভা। এখন ২০৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রংপুর  সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৩। এর মধ্যে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড এখনো গ্রাম। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সদর উপজেলার ১০টি, কাউনিয়া উপজেলার সারাই ও পীরগাছা উপজেলার কল্যাণীসহ ১২ ইউনিয়নের ১১২ মৌজা। এর মধ্যে সাতটি ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ এবং পাঁচটির আংশিক।
সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১৮ হাজার পরিবার ভিজিএফ কার্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেত। কিন্তু সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এসব এলাকার দুস্থ-অসহায় পরিবারগুলো ভিজিএফ কার্ডসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে পাঁচ বছর ধরে বঞ্চিত। এ জন্য সুবিধাবঞ্চিত ভোটাররা দুষছেন স্থানীয় কাউন্সিলরদের।

রংপুর সদর উপজেলার সাবেক উত্তম ইউনিয়ন ভেঙে করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ তিন ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেতারপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান, সুলতান মাহমুদ, আলীমুদ্দিন ও আদনান মিয়া বলেন, ২০১২ সালে আমরা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। গত পাঁচ বছর থেকে আমরা ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ডসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাঁচ বছরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাদের তেমন একটা খোঁজও নেননি। এখন ভোটের মৌসুম শুরু হয়েছে। তাই অনেকে ভোট চাইতে আসছেন। কিন্তু আমাদের সুযোগ-সুবিধার কথা কেউ মনে রাখেননি। তাই এবার ভোট দেব সেই প্রার্থীকে, যিনি আমাদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন।

বর্তমান ১৪ নম্বর ওয়ার্ড ছিল সাতগাড়া ইউনিয়ন পরিষদের আওতায়। এর আয়তন ১০ দশমিক ৯২ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২১ হাজার ২৬৮। এখানেও রয়েছে বঞ্চনার ক্ষোভ। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা মন্টু মিয়াসহ অনেকে বলেন, আমরা যে কাউন্সিলরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলাম, এলাকার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই বললেই চলে। দরকারের সময় তাঁকে কাছে পাওয়া যায়নি। তাঁরা আরো বলেন, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দরিদ্র মানুষের ভিজিএফ কার্ডসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জানান, ওয়ার্ডজুড়ে দুটি পাকা রাস্তা। বাদ বাকি সব কাঁচা। এলাকার দৃশ্য দেখলে কেউ মনে করবে না, এটি সিটি করপোরেশন এলাকা।

সাবেক সদ্য পুষ্করিণী ইউনিয়ন বর্তমানে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায়। এর আয়তন ৭ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২১ হাজার ২২৬। এ ওয়ার্ডে ভোটাররা জানান, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এ ওয়ার্ডের কোনো উন্নয়নই হয়নি। তাঁদের মতে, এ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী। ভিজিএফসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাতিল হয়েছে পাঁচ বছর আগেই। শাহদাত মিয়া, বুলবুল আহমেদসহ বেশ কজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা যে আশায় গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলাম, তার সিকিভাগও পূরণ হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকায় দিনরাতে সব সময়ই লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়া ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় মানসম্মত লেখাপড়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার ছেলে-মেয়েরা।

সাবেক পরশুরাম ইউনিয়নকে ভেঙে করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড; যেখানে মৌজা রয়েছে বাহাদুর সিংহ, কোবারু ও চব্বিশ হাজারী। শহরের খুব কাছাকাছি হলেও এসব এলাকায় দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ ওয়ার্ডের বাহাদুর সিংহ গ্রামের কেচুয়ানি বেওয়া, আনোয়ারা খাতুন, ফাতেমা বেগমসহ অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সিটি হওয়ায় হামারা তো গরিব থাকি বড়লোক হই নাই। হামরা যে প্রত্যেক মাসে চাউল পাচনো অ্যালা তাক বন্ধ হইল ক্যান। সিটি হয়্যা কী পাইনো হামরা!’ এবারে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তাঁরা কাউকে ভোট দেবেন না বলে জানান।

ওই এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলাম দুখু। তিনি এবার সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে ভিজিডি, ভিজিএফসহ এখানকার দুস্থ পরিবারগুলো সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আগেকার দিনে তারা এলাকার কাউকে ইউপি সদস্য নির্বাচন করত, তাঁর মাধ্যমে তারা এসব
সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দিনাতিপাত করত। পাঁচ বছর ধরে তারা বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি মাসে তিন হাজারের বেশি দুস্থ পরিবারকে ভিজিডির চাল দেওয়া হতো বলেও জানান সাবেক ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম দুখু।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ফরিদুল হক জানান, যেসব ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ভিজিএফ-ভিজিডি বিতরণ বন্ধ রয়েছে। এখানে তাঁদের করার কিছু নেই।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page