• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরনে হরিলুট

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

বাবুল আহমেদ(মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি॥
*আমি “সংগ্রামী জীবন” (ছদ্ম নাম) ঘিওর ডি.এন স্কুলের ছাত্র । এস.এস.সি পরীক্ষা-২০১৮ এর ফরম পুরনের এর জন্য নেওয়া হয়েছে ৯ হাজার টাকা। রশিদ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার একশত টাকার। এই দূর্নীতিবাজদের জন্য কলংক হচ্ছে ঘিওর ডি.এন. স্কুলের।
* আমি মোনালিছা মুন সুমি ঘিওর ডি.এন স্কুলের ছাত্র এস.এস.সি পরীক্ষার ফরম পুরন এর জন্য ১১ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি অনেক কাকুতি মিনতী করে ৮ হাজার টাকায় ফরম পুরণ করিয়েছি। কিন্তু আমার রশিদে উঠানো হয়েছে ৩ হাজার একশত টাকার। এই দূর্নীতি থেকে ঘিওর ডি.এন.স্কুলকে মুক্ত দেখতে চাই।
* আমি মোঃ বাবু। আমি একজন দরিদ্র ঘরের সন্তান। আমার বাবা একজন দিন মজুর। ভালভাবে আমাদের সংসার চলেনা। ঘিওর ডি. এন স্কুলের ছাত্র এস.এস.সি পরীক্ষার ফরম ফ্লাপ এর জন্য আমাকে বলা হয় ১২ হাজার টাকা দিতে হবে। এক হাজার কম হলে ফরম ফ্লাপ হবে না। তাই আমার আর এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া হলো না।
উপরোক্ত বক্তব্যগুলো অনুষ্ঠিতব্য ৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।
এস.এস.সি’র ফরম পূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ টাকার পরিমান ১ হাজার ৫ শত ৮০ টাকা । কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জেলার স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে এর কয়েকগুণ টাকা আদায় করেছে। কোন কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে, আবার কোথায় নোটিশ ছাড়াই। কোথাও আদায় করার একটি অংশ ব্যাংকে, অন্য অংশ নগদ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছরই বাড়তি ফি আদায় করছে তা নয়। বছরের পর বছর একই চিত্র।
অভিভাকরা বলছেন, অবস্থাটা এমন যে, নানা ফন্দি, নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যত বেশি আদায় করা যায় স্কুল কর্তৃপক্ষের পকেট ততটাই ভারি হবে অনৈতিক অর্থে। এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষায় অনলাইনে ফরম পূরণ শুরু হয়েছে ৭ নভেম্বর শেষ হয়েছে ১৪ নভেম্বর। তবে শিক্ষার্থীরা বিলম্ব ফি দিয়ে ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত তা পূরণ করেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী অসহায় অভিভাবকরা সন্তানের ফরম পুরণ করিয়েছেন, চোখের কোনে নোনা পানি ঝড়িয়ে।

২০১৮ সালের এস.এস.সি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী প্রতি সর্বোচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫শত ৮০ টাকা। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ভেদে ফি একটু কম-বেশি হবে। সব বিভাগের জন্যই বিলম্ব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতেই এস.এস.সি পরীক্ষা শুরু হবে। ইতিমধ্যে স্কুলগুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হয়েছে। স্কুলের এসব শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমও শেষ হয়েছে।
ঘিওর উপজেলা সদরের ঘিওর ডি.এন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদারের কাছে ফরম ফুরণে অতিরিক্ত ফি ও অনিয়মের কথা জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা ১৪৫০ টাকা নিচ্ছি। আমরা কোন রকম অতিরিক্ত ফি আদায় করছি না। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন, বাস্তবে দেখা গেছে ওনারা সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২ শত টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন কোন প্রকার রশিদ ছাড়া। আবার যাদেরকে রশিদ দেওয়া হয়েছে তাদের রশিদে উল্লেখ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭ শত ৭৫ টাকা, ৩ হাজার ১ শত ৭৫ টাকা। বাকী টাকার কোন রশিদ দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, স্যার’রা ইচ্ছা করেই টেষ্ট পরীক্ষায় বেশীরভাগ শিক্ষার্থীদেরকে ফেল করিয়েছে বেশী টাকা আদায় করার লক্ষ্যে। আবার কাউকে কাউকে দুই পরীক্ষার গড় নম্বর দিয়ে অকৃতকার্য দেখিয়েছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের উদ্দেশ্যে।
ঘিওর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ.বি.এম আব্দুল হান্নান বলেন, কিছুদিন আগেই শিক্ষা বোর্ড এস.এস.সি’র ফরম পূরণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা আদায় করতে পারবে সেখানে সব উল্লেখ আছে। তার পরও কোন প্রতিষ্ঠান যদি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেন, এস.এস.সি’র ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে আমার কাছে এরকম কোন তথ্য নাই। যদি কোন লিখিত অভিযোগ পাই এবং তা প্রমানিত হয় তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page