• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনে যাব তবে শেখ হাসিনা ও এই পার্লামেন্টের অধীনে নয় :খালেদা জিয়া

আপডেটঃ : বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবেই। চাইলেও বিরত রাখা যাবে না। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।  আমরা শেখ হাসিনা ও এই পার্লামেন্টের অধীনে নির্বাচনে যাবো না।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে নির্বাচন হবে না। বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। তাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না। দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, আইনের শাসন, কথা বলার অধিকার নেই। তার প্রমাণ একটু আগে দেখলাম। অনেকদিন ধরে ছাত্ররা আলোচনা সভার প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি দিয়েছে, ভাড়াও নিয়েছে। অথচ হঠাত্ করে হলরুমে তালা লাগিয়ে দিলো।

খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের দুঃখের সীমা নেই। তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সে জন্য পরিবর্তন আসতে হবে। নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার লাগবে। বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ভারত আমাদেরকে স্বাধীনতার সময় সাহায্য করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধুর মতো দেখতে চাই। বন্ধু হয়ে থাকতে চাই সবসময়। তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের চেয়েও বেশি নির্যাতন করছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে সরকার, এখানে শুধু মুক্ত হলো শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, তাদের বিরুদ্ধে একদিন দেশের মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে। জঙ্গিবাদের জন্যও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন আওয়ামী লীগই জঙ্গি সৃষ্টি করেছে। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাই তাদেরই আত্মীয়স্বজন। তারা এখন ছেলেপুলেদের ধরছে আর বলছে এটা জঙ্গি, ওটা জঙ্গি। এসব বিদেশিদের দেখানোর জন্য। দাঁড়ি টুপিওয়ালা লোকজন হলেই জঙ্গি। দেশের পুলিশ খারাপ নয়, আওয়ামী লীগ পুলিশকে খারাপ বানাচ্ছে।

পদ্মাসেতুতে উঠবেন না: সবাইকে সতর্ক করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে পদ্মাসেতু নির্মিত হলে এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। এই সেতু হবে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এটি জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে নাটকীয়তা: এর আগে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিতে গেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়,অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। মিলনায়তনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে দুই মাস আগে হল রুমে আলোচনা সভা করার অনুমতি নিয়েছিলাম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়াও নেন তাঁরা। কিন্তু সোমবার সকাল ৯টায় সমাবেশ স্থলের এক কর্মকর্তা ফোন করে জানান, শাহবাগ থানার অনুমতি পেলে মিলনায়তনের গেট খোলা হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির একটি অনুষ্ঠান আছে। তাই  নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্র সমাবেশ করতে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই সমাবেশে  আপত্তি জানিয়েছে। সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার অজুহাতে তা বাতিল অগণতান্ত্রিক।

বিকাল সাড়ে ৪টায় ছাত্রদলের হাজারো নেতা-কর্মীর সঙ্গে সেখানে গিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। তার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র নেতারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সামনে জড়ো হন। সেখানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন দেন তারা। খালেদা জিয়া তার গাড়ীতে বসা ছিলেন। খালেদা জিয়াকে ঘিরে ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছিল। তার উপস্থিতিতে বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে ইনস্টিটিউশন চত্বর থেকেই মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ তারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে অবস্থান করবেন। ব্যাপক বিক্ষোভ ও খালেদা জিয়ার অনঢ় অবস্থানের কারনে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় তালা খুলে দেয়া হয় মিলনায়তনের। এর কিছুক্ষণ পরই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর সময় নির্ধারিত থাকলেও তালাবদ্ধতার কারনে সন্ধ্যায় শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। রাত সাড়ে ৭ টায় বক্তব্য দেন বেগম জিয়া।

নতুন করে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার প্রসঙ্গে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার ইত্তেফাককে বলেন, খালেদা জিয়াকে আইইবির ভেতরে ঢুকতে কেউ বাধা দেয়নি। নতুন করে অনুমতি দেয়ার কিছু নেই। আমরা আগেই তাদেরকে অনুমতি দিয়েছি। মিলনায়তন কর্তৃপক্ষ জানে কেনো তারা তালা ঝুলিয়েছিলো।

ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড.আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ