• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ নতুন দেড়’শ হেক্টর জমি অধি গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কালক্ষেপণ

আপডেটঃ : রবিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৮

মো. সোহরাব হোসেন রতন (বাগেরহাট) প্রতিনিধি॥
বাগেরহাটে খানজাহান আলী (র:) বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ ২২ বছর ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। এখনও শুরু হয়নি মুল বিমান বন্দও নির্মান কাজ। বিমান বন্দর এলাকা সম্প্রসারণের জন্য আরও দেড়’শ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। এই বছরের জুন মাস নাগাদ বিমান বন্দরের ভবনসহ রানওয়ের দৃশ্যমান নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহনের কাজ শেষ না হওয়ায় তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বাগেরহাট সদরের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অধিগ্রহণজনিত বিলম্বের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বছর জুনে প্রকল্পের মূল কাজ হয়তো শুরু করা সম্ভব হবে না। সরেজমিন বাগেরহাটের রামপালে প্রকল্প এলাকার ফয়লা, হোগলডাঙ্গা, গোবিন্দপুর ও গোদারডাঙ্গায় ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপত্তারক্ষীরা বেষ্টনী দেওয় এলাকাটি পাহারা দিচ্ছে। সেখানে আগের মাটি ভরাট করা এলাকার বাইরে নতুন কোন কাজ চলমান নেই। প্রকল্পের পশ্চিম দিকে প্রস্তাবিত নতুন অধিগ্রহণ করা এলাকায় বেশ কিছু নতুন টিনের ছোট অবকাঠামো গঢ়ে ইঠেছে। অধিগ্রহণ হওয়া জমির বর্ধিত মূল্য পেতে গ্রামবাসী নিজ জমিতে এ ধরণের ঘর নির্মাণ করছেন। এই অবস্থায় প্রকৃতপক্ষে আর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে জুন মাস নাগাদ সত্যিই সেখানে দৃশ্যমান নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি না, তা এলাকার মানুষের কাছে বড় একটি জিজ্ঞাসা হয়ে রয়েছে।মোংলা বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এবং সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা মাথায় রেখে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রচেষ্টায় ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খলেদা জিয়া বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মোংলা-মাওয়া-ঢাকা মহাসড়কের পাশে হযরত খানজাহান আলী (র:) বিমান বন্দর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গত প্রায় ২২ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়িত কার্যক্রমের তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে সেখানে মাটি ভরাট কাজ শুরু করে। প্রায় ৪৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ কোটি টাকায় আংশিক মাটি ভরাট কাজ ছাড়া তখন আর কোন কাজ হয়নি। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আবার মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যে অর্থাভাবে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের সময়ে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরকে ঘিরে ধারাবাহিক উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নতুন করে সামনে আনা হয়। পদ¥া সেতু নির্মাণ কজের পাশাপাশি এই বিমান বন্দর নির্মাণ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় এই বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় এবং এ জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। তবে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের পর দুই বছর পার হলেও নতুন জমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে বাঁধার কারণে খান জাহান আলী (র:) বিমান বন্দর নির্মাণ কাজ গতি পায়নি। বিশিষ্টজনদের মতে বাগেরহাট শহর, মোংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সাথে প্রায় ২৫ মিনিটের সমদূরত্বে নির্মিত হচ্ছে এই বিমান বন্দরটি। বিমান বন্দরটি বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হযরত খান জাহান আলীর মাজার ও বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ, মোংলা সমুদ্র বন্দর, মোংলা রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, প্রক্রিয়াধীন মোংলা-ঢাকা ও মোংলা-খুলনা রেলপথ, চিংড়ি শিল্পসহ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। এসবের সম্মিলনে অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাড়ানোর শক্তি পাবে। বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুন উল হাসান জানিয়েছেন, বিমান বন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে নতুন করে আরও ১৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভূমি জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের কাজ শুরু হচ্ছে। এ বছরের জুন মাস নাগাদ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের সরসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুন উল হাসান।বাগেরহাট খান জাহান বিমান বন্দর প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ জানান, ’জমি অধিগ্রহণের কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি আর মন্ত্রী ছাড়া আর কারও মিডিয়ার সাথে কথা বলার নির্দেশ নেই। আমি কিছুই বলবো না। বগেরহাট সদর আসনের এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, বর্তমান সরকার এই অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়নের স্বার্থে খান জাহান আলী (র:) বিমান বন্দরকে আধুনিক উন্নত বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আরও প্রায় দেড় শত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া হচ্ছে। জমির মালিকানা নির্ধারণের পর বিমান বন্দরের মূল কাজ শুরু হবে। এ নিয়ে বিলম্বের কারণে হয়তো চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে মূল কাজ শুরু করা যাবে না। তবে বিমান বন্দরটি নির্মাণে সরকারের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ