• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন

আমদানি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন পণ্য ডলার ও টাকার সঙ্কটের আশঙ্কা, বাড়তে পারে সরকারের ব্যাংক ঋণ

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৮

দেশের আমদানি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন পণ্য। এ পণ্যের প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে নতুন জ্বালানি এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)। আগামী এপ্রিল থেকে এ নতুন জ্বালানি আমদানি শুরু হবে। এছাড়া দেশে শুরু হওয়া বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও আমদানি করতে হবে অনেক পণ্য। এসব কারণে বাড়বে বাণিজ্য ঘাটতি। বাড়বে ডলারের চাহিদাও। বড় প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ব্যাংকমুখি হতে হবে। ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা ধার নেবে সরকার। এতে টাকার সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। আর চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হওয়ায় আগে থেকেই আর্থিক খাতে কিছুটা অস্থিতিশীলতারও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, আমানতের সুদহার কমছে। ফলে নতুন করে মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখছে না। বেসরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। এজন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ঋণ নেওয়া লাগবে। আর কয়েকমাস পর থেকে আমদানি পণ্যে নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হচ্ছে এলএনজি। ফলে আমদানি খরচ বাড়বে। এতে ডলারের মূল্য বাড়বে। একইসঙ্গে সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের আমদানি অনেক বেশি হচ্ছে। সে তুলনায় রপ্তানি আয় হচ্ছে না। অন্যদিকে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও খুব বেশি নয়। কয়েকমাস যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেড়ে যাবে। আর ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা এ অর্থনীতিবিদের।
আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি। আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার। অপরদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়েও কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি। আর জুলাই থেকে ডিসেম্বর— এ ছয় মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাত দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। আবার আমদানিজনিত চাপে দেশের ভেতরে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। ফলে চাহিদার তুলনায় ডলারের যোগান কমে গেছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গতকাল কয়েকটি ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮৪ টাকার উপরে। একবছর আগে যা ছিল ৭৮ টাকা ৪৫ পয়সা। রেমিট্যান্স আরো কমলে ডলারের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে টাকার অবমূল্যায়ন আরো বাড়বে। এতে রপ্তানি আয়ের ওপর চাপ পড়বে আরো বেশি। আমদানি ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় কারণে দেশের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৯৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। একবছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অর্থাত্ পুরো বছরে আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম রেমিট্যান্স এসেছে। ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। আর ২০১৭ সালের পুরো বছরে দেশে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
এদিকে আগামী এপ্রিলে পেট্রোবাংলার উদ্যোগে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি শুরু হবে বলে জানা গেছে। আর আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে সামিট গ্রুপের আরো ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি শুরুর কথা রয়েছে। তখন আমদানি খরচ আরো বাড়বে।
পদ্ম-সেতুসহ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থ পরিশোধের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের অর্থ পরিশোধের জন্য সরকারের অনেক টাকার দরকার হবে। আর সে টাকার সিংহভাগই আসবে ব্যাংক ঋণ থেকে। তাই সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতদিন সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সরকারি ঋণের বড় অংশ আসলেও এখন আসবে ব্যাংকের মাধ্যমে। ফলে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট থাকবে না। উল্টো ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট হতে পারে। কেননা, আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় নতুন করে আমানত আসছে না।
বেসরকারি খাতে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানায় উত্পাদন শুরু হয়েছে। বেজা সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া বেসরকারি ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ পর্যন্ত ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। দেশে আরও নতুন করে ১৯টি স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে জমি নির্বাচন করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এগুলোর কাজ শুরু হলে আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় টাকার উপরও চাপ বাড়বে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page