• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

ছিনতাইকারীদের দমনে বিশেষ অভিযান চালানো হউক

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮

স্বামীর হাত ধরিয়া রাস্তা পার হইতেছিলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী হেলেনা বেগম। তিনি যখন মাঝরাস্তায়, ঠিক তখনই চলন্ত প্রাইভেট কার হইতে এক ছিনতাইকারী আচমকা হ্যাঁচকা টান দেয় তাহার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরিয়া। হেলেনা ব্যাগসহ পড়িয়া যান। ওই অবস্থায় ছিনতাইকারীরা তাহাকে হেঁচড়াইয়া প্রায় কয়েকশত ফুট লইয়া যাওয়ার পর গাড়ির চাকায় পিষ্ট হইয়া মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান চার সন্তানের জননী হতভাগ্য এই নারী। স্বামী মনিরুল ইসলামকে অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করিতে হয় এই ভয়াবহ দৃশ্য। গত শুক্রবার ভোরে ধানমন্ডি ৭ নম্বর সড়কের সম্মুখে ঘটিয়া যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হইলে হয়ত আমরা কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজিয়া পাইতাম। কিন্তু বাস্তবতার সাক্ষ্য ভিন্ন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে একইভাবে রাজধানীতেই ছিনতাইকারীদের নৃশংসতার বলি হইয়াছে এক অবোধ শিশু। ইহার অল্প কয়দিন আগেই ছিনতাইকারীদের হাত হইতে এক দম্পতিকে বাঁচাইতে গিয়া প্রাণ হারাইয়াছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। প্রায় কাছাকাছি সময়ে মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হইয়াছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক তরুণ চিকিত্সককে। শুধু তাহাই নহে, হেলেনাকে যেইদিন হত্যা করা হয়—সেইদিনই সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীদের নিষ্ঠুরতার শিকার হইয়া প্রাণ হারাইয়াছেন খুলনার এক ব্যবসায়ী। তাহার পরও ছিনতাই থামিয়া নাই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিও যে এখন আর নিরাপদ নহে—হেলেনা জীবন দিয়া যেন তাহা নিশ্চিত করিয়া গিয়াছেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার ইত্তেফাককে বলিয়াছেন, ধানমণ্ডিতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করিয়া আইনের আওতায় আনিতে পুলিশি অভিযান চলিতেছে। পুলিশ যে বসিয়া নাই তাহা আমরা জানি। ইতোপূর্বে ছিনতাই ও খুনের সহিত সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হইয়াছে। তাহার পরও ছিনতাই রোধ এবং ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ ব্যাপক। মূলত এই কারণে ভুক্তভোগীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যথাসম্ভব থানা-পুলিশ এড়াইয়া চলেন বলিয়া জানা যায়। অন্যদিকে, পুলিশের মধ্যেও এই ব্যাপারে হতাশা আছে। তাহাদের বক্তব্য, ছিনতাইকারীদের আটক করা হইলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়া তাহারা বাহির হইয়া যায় এবং আবারও একই অপরাধে লিপ্ত হয়। পুলিশের এই বক্তব্য অগ্রাহ্য করিবার মতো নহে। পাশাপাশি ইহাও লক্ষণীয় যে, আমাদের জনসংখ্যা ও অপরাধের ব্যাপকতার তুলনায় পুলিশের জনবল খুবই অপ্রতুল। ফলে থানা-পুলিশকে প্রায়শ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ নিবদ্ধ রাখিতে হয়। অতএব, একতরফাভাবে পুলিশকে দায়ী করিবারও অবকাশ নাই।

রাতারাতি পুলিশের জনবল বাড়ানো সম্ভব না হইলেও যেই কাজটি করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে তাহা হইল—ছিনতাই প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করিয়া ইতোমধ্যে পুলিশের বেশকিছু স্পেশাল ইউনিট গঠন করা হইয়াছে এবং তাহার সুফলও আমরা পাইতেছি। আমরা মনে করি, ছিনতাইকারীদের দমনেও অনতিবিলম্বে বিশেষ টিম গঠন করিয়া সর্বাত্মক অভিযান চালানো উচিত। যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক, পুলিশের সামর্থ্য লইয়া আমাদের কোনো সংশয় নাই। আমাদের পুলিশ বাহিনী যে সফলভাবে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম তাহা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত।

 

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page