• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

দুই দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্যকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন। অব্যাহত রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। চলছে কথার লড়াই। বিচারাধীন ওই মামলার রায় ঘোষণা নিয়ে দু’পক্ষের বক্তব্যই বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, আদালত নিয়ে লাগামহীন কথাবার্তাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের মন্তব্য বিচার ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়। এটা মোটেই বাঞ্চনীয় নয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। বিচারাধীন এই মামলা নিয়ে সম্প্রতি প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ছাড়াও অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল’র পরিচালক ড. শাহদীন মালিক শুক্রবার টেলিফোনে ইত্তেফাককে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলায় নিম্ন আদালত যে রায় ঘোষণা করবে সেটা চূড়ান্ত রায় নয়। কারণ রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে গেলে অবশ্যই আপিল হবে। আর পক্ষে না গেলে দুদকও আপিল করতে পারে। আর ওই আপিল দায়ের হবে হাইকোর্টে। এমনকি আপিল বিভাগেও আপিল হতে পারে। ওই আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে রায় পেতে আরো দুই বছর সময় লাগবে বলে আমার মনে হয়। ফলে এ পর্যায়ে (রায় ঘোষণার দিন ধার্য) এত মাতামাতি বা রাজনৈতিকভাবে মাঠ গরম করার যৌক্তিকতা খুবই অল্প। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আদালত নিয়ে যে লাগামছাড়া কথাবার্তা বলা হয় তাতে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। কিন্তু এই লাগামছাড়া কথাবার্তাতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। এটা মোটেই বাঞ্চনীয় নয়।

সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, বিচারাধীন মামলার ফলাফল বিষয়ে কোন মন্তব্য করা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। এ ধরনের মন্তব্য বিচার বিভাগের জন্য কখনো শুভ নয়। এসব মন্তব্য বিচার ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই জনগণের শেষ ভরসার স্থল। কিন্তু আগাম মন্তব্য করে রায়ের ফলাফল সম্পর্কে আশংকা ব্যক্ত করা হলে সেটি কখনো ন্যায় বিচারের সহায়ক নয়। তা আদালতের জন্য মর্যাদাহানিকর। তিনি বলেন, আদালত অবমাননার বিষয়ে কোন আইনের অস্তিত্ব নেই। সুতরাং বিদ্যমান মামলায় আদালতের বাইরে রায় নিয়ে মন্তব্য করা হলে তা আদালত অবমাননাকে স্পর্শ করে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রসঙ্গত গত ২৩ জানুয়ারি লালমনিরহাটে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেন, বেগম জিয়া আমাকে ছয় বছর জেলে আটকে রেখেছিল। এত দিন পরে খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন, আল্লাহ পাকের বিচারও আছে। সুবিচার আমাদের ওপর হবে। ওনার (খালেদা) বেশি দিন নাই। ওনাকে জেলে যেতেই হবে।’ পরদিন নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় পূর্ব নির্ধারিত। এই অবৈধ সরকার আগেই রায় লিখে রেখেছে। বিচার হবে সরকার যা চাইবে, তাই। গত ১৮ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি ও স্থ্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সনকে জেলে যেতে হবে। পরদিন ১৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়া এক টুইট বার্তায় বলেন, বিচারাধীন মামলার রায় ঘোষণা আদালত অবমাননা নয় কি? তবে গতকাল নারায়ণগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রায় কি সরকার দেবে? রায় দেবে আদালত। আদালতকে জিজ্ঞেস করুন। কি রায় হবে, তার আগেই বিএনপি নেতারা আদালতকে হুমকি দিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page