• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

মাছ ও মুরগির খাবারে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য কারখানা বন্ধের দাবি বিশেষজ্ঞদের

আপডেটঃ : শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

‘পাল্ট্রি ফিডে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য, গভীর সংকটে জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, পাল্ট্রি ও মাছের খাবারে (ফিড) পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য। চামড়ার বর্জ্যে রয়েছে অত্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান। এসব বর্জ্য দিয়ে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি হওয়ার ফলে ডিমে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম নামে রাসায়নিক পদার্থ ধরা পড়েছে।
ক্রোমিয়াম এবং সীসা মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি প্রবেশ করলে মানুষের লিভার, কিডনি, ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেম অচল হয়ে যায়। একদিকে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে নারীর প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি মানবদেহে মরণব্যাধি ক্যান্সারও বাসা বাঁধতে পারে। এতে করে দেশবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক এর চেয়ারম্যান মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নিরাপদ খাদ্য-পানীয় ও ভোক্তা অধিকার কর্মসূচির সদস্য সচিব জাহেদুর রহমান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম আব্দুল মোমিন, পশুসম্পদ ও পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ বিধান চন্দ্র দাস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ।
ড. এম আব্দুল মোমিন বলেন, পাল্ট্রি ও মাছের খাবারে (ফিড) পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে মাছ ও মুরগীর খাবার তৈরি হচ্ছে, আর এই খাবার খাওয়ানোর ফলে মাছ ও মুরগির শরীর হচ্ছে বিষাক্ত। এতে বাড়ছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং দূষিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষি জমি, নদীর পানি, বাতাস ও পরিবেশ। তিনি বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে শতাধিক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। চামড়া ফিনিশিং প্রক্রিয়ার শেষ স্তর পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ক্রোমিয়াম। এটি আগুনে জ্বালালেও ক্ষয় হয় না। মাটিও হজম করতে পারে না। কিন্তু সেই কেমিক্যাল আমাদের দেহে প্রবেশ করে নীরবেই মরণব্যাধি ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
বিধান চন্দ্র দাস বলেন, আগে হাজারীবাগের বিভিন্ন স্থানে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে তৈরি হতো এসব মাছ ও মুরগির খাবার। এখন সাভারের ভাকুর্তার মোগড়াকান্দির চকে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ও মাছের খাবার। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমরা জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ যৌথভাবে কাজ করেছে চামড়ার বর্জ্য মিশ্রিত খাবার নিয়ে। এতে দেখা যায়, যেসব এলাকায় এসব খাবার যাচ্ছে ঐ এলাকার ডিমে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম নামে রাসায়নিক পদার্থ ধরা পড়েছে। ক্রোমিয়াম এবং সীসা মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি প্রবেশ করলে মানুষের লিভার, কিডনি, ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেম অচল হয়ে যায়। এতে একদিকে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে নারীর প্রজননক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি মানবদেহে ক্যান্সারের মতো মরণ ঘাতকও বাসা বাঁধতে পারে।
মহিদুল হক বলেন, ক্ষতিকর এই বর্জ্যের বিষয়ে ২০১১ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মাসের মধ্যে বর্জ্য দিয়ে মাছ-মুরগির খাবার তৈরির কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ট্যানারি বর্জ্য থেকে পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু উচ্চ আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই দেদার ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে মাছ ও পোল্ট্রি ফিড। তিনি অবিলম্বে এই বিষাক্ত ফিড তৈরি বন্ধ ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ