• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

আগামী তিনদিন মানববন্ধন, গণঅবস্থান, অনশন সামনে বড় আন্দোলনের শক্তি সঞ্চয় করতে চাই, এখন মুক্তির জন্য অহিংস, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে :ফখরুল

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা ও তার কারাবাস নিয়ে সারাদেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-উত্তাপ-উত্তেজনা চরমে পৌঁছালেও আপাতত নরম কর্মসূচিতেই থাকতে চাচ্ছে দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ’সহিংস’ হবে না বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের নেত্রী নিজেই বলে গেছেন, ‘আমার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের জন্যে, আসন্ন নির্বাচনের জন্যে আমাদের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন হবে অহিংস, সেই আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক’।” তিনি বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য উচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অহিংস-শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও চালিয়ে যাবে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আইনি এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করব। উপযুক্ত সময়ে কঠোর আন্দোলনে মাঠে নামে নেতা-কর্মীরা।

গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপির গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে টেলিফোনে বক্তব্য দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সকলকে ধৈর্য ধারন করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার আহবান জানান। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণতান্ত্রিক অন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।

দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগম জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে সব সিরিজ বৈঠক করেছেন নেতাদের সঙ্গে। বৈঠকগুলোতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন। সরকারের ফাঁদে পা না দেওয়া, সহিংসতায় না জড়ানো, কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিতে নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করেন।

সিলেটে শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার জেয়ারত করে স্থানীয় সার্কিট হাউসে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, অহিংস কর্মসূচির পাশাপাশি, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রতি বেশি মনোযোগী হতে বলেন।  বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো বেশ দূরে রয়েছে। এখন দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা ও তার সাজাকে পুঁজি করে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশের বাইরেও বিদেশিদের সামনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। রায় নিয়ে কঠোর কর্মসূচিতে গেলে তাদের মূল টার্গেট নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাচনের দাবি আদায়ই ব্যর্থ হয়ে যাবে।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এটা চূড়ান্তই বলা চলে। নির্বাচনকে ঘিরে তাদের সব প্রস্তুতি। আগামীতে আন্দোলন হবে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন। তাই সব ঠিক থাকলে আগামী জুলাই-আগস্টের আগে বড় ধরনের আন্দোলনে নামছে না বিএনপি। কারণ সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সে হিসাব করে আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করছে দলটি। দলের নেতারা মনে করেন যে, বেগম জিয়ার সাজা নিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনে গেলে সরকার নাশকতার মামলা দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতো। সিনিয়র নেতারা এসব মামলায় কারাগারে থাকতো।

অনশন-মানববন্ধনসহ তিন দিনের নতুন কর্মসূচি

এদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে মামলায় সাজা প্রদানের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তাঁর নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে অনশনসহ তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে : আগামীকাল সোমবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলায় মানববন্ধন, মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলায় অবস্থান এবং বুধবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলায় অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। দু’দিনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে নতুন করে তিন দিনের কর্মসূচি দিল বিএনপি।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি তাদের মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ কারাগারে রাখা হয়েছে। তার কোনো ক্ষতি হলে দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। গতকাল রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান টেলিফোনে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনুপ্রেরণামূলক। এখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ফখরুল অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া যে ঘরটিতে আছেন সেটি নড়বড়ে। তিনি অসুস্থ হওয়ার পরেও তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়নি, তাঁর চিকিত্সার কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পাঁচ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি

বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশের প্রতিটি বারে পাঁচ দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ আইনজীবী ফোরাম। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে বলেও মনে করে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page