• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার অপর নাম ভোগান্তি

আপডেটঃ : রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

এস.কে কামরুল হাসান, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি॥
চিকিৎসা সেবা বাংলাদেশ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানিক স্বীকৃতি পেলেও পায়নি তাদের অধিকার। একটি নাগরিকের বেচে থাকার জন্য সাধারন জনগনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগ প্রতিনিয়তই পোহাতে হচ্ছে রাষ্ট্রের কিছু অসাধু কর্মকর্তার দূর্ণীতি ও উদাসীনতায়। বাসস্থান খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা ও চিকিৎসা ৫টি মৌলিক অধিকার। কিন্তু চিকিৎসা সেবায় কেমন আছেন সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ? সরকারি চিকিৎসালয় এবং সেবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেমন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন তারা? চিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে কীভাবে নিশ্চিত করেছে সাতক্ষীরার চিকিৎসা প্রশাসন? সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিত্র দেখলে তা অনুধাবন করা যায়, রোগীদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। পূর্বের সিভিল সার্জন ডাঃ উৎপল কুমার দেবনাথ তার বিভিন্ন অসচেতনতায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের যে চিত্র রেখে গিয়েছিলেন এবং বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ তৈহিদুজ্জামান নতুন দ্বায়িত্ব গ্রহন করলেও হাসপাতালের চিত্র আরও নাজুক বলে দাবি করেন সচেতন মহল। কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি, কমেনি কোন দূর্ণীতি। এখন পূর্বের ন্যায় রোগীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। স্বল্প সংখ্যক রোগীর উপস্থিতি থাকলেও তারা ঠিকমত সেবা পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন, সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি। সূত্র জানায়, এই হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তারই ব্যাস্ত থাকে খোশ গল্পে, চায়ের আড্ডায় এবং ক্লিনিক চেম্বারে রোগী দেখায়। ভুক্তভুগি রোগীরা জানান, চিকিৎসা নিতে এসে কোন ডাক্তার কে পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকেও এ এক মৃত্যুযন্ত্রনা সইতে হয় ভুক্তভোগী রোগীদের। নাম বলতে অনিচ্ছুক  হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় একটি গোপন কক্ষে ব্যাস্ত থাকেন বেশিরভাগ ডাক্তাররা বিভিন্ন আড্ডায়। সেসব ডাক্তাররা হলেন ডাঃ আরিফ, ডাঃ ফয়সাল আহম্মেদ, ডাঃ দেলোয়ার, ডাঃ নারায়ণ প্রসাদ স্যান্যাল, ডাঃ শামসুর রহমান, ডাঃ নাসরিন আক্তার, ডাঃ আজমল হোসেন, ডাঃ হাসানুজ্জামান, ডাঃ শরিফুল, ডাঃ ডিনা এবং জুনিয়ার ডাক্তারগণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সমায়ের পর থেকে এ হাসপাতালের কোন উন্নয়নের ছোয়া না লাগলেও জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল  হকের আন্তরিকতায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল উন্নীত হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে। জেলার মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে উন্নত যন্ত্রাংশ তিনি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষ চিকিৎসক নিয়ে আসেন। কিন্তু বর্তমানে সেই মানের স্বাস্থসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলাবাসী। যে কারণে জেলার মানুষ হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নিতান্ত বাধ্য না হলে হাসপাতালে সহজে যেতে চাচ্ছেন না সাধারন রোগীরা। যে কারণে কমতে শুরু করেছে রোগীদের চাপ। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে জরুরী বিভাগের সেবাহীনতার কথা প্রকাশ করলেন কয়েকজন ব্যক্তি। জরুরী বিভাগে সেবা নিতে গেলে টাকা না পেলে রোগীর গায়ে কেউ হাত দেননা বলে জানান তারা। বলা হয়ে থাকে গজ, ব্যান্ডেজ, সেলাই সুতা এবং জরুরী ভিত্তিতে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়, পরবর্তীতে স্টাফদের কাছে টাকা দিলে সবকিছুই স্টোর থেকে বের হয়। এ বিষয়ে জরুরী বিভাগের কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জরুরী বিভাগে সরবরাহ থাকেনা। যদিও মানহীন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পথে বসেছে অসংখ্য পরিবার। ভুল চিকিৎসায় প্রতিমাসে মারা যাচ্ছে একাধিক রোগী। আর এ গুলোর কোন বিচার হচ্ছে না। জেলার চিকিৎসা সেবার এই বেহাল দশার পেছনে কয়েক জন প্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় নামধারী কিছু হলুদ সাংবাদিকদের দুর্নীতিগ্রস্থ স্বাস্থ্য প্রশাসনের নিকট থেকে নেওয়া মাসোহারা ও অনৈতিক সুবিধায় দ্বায়ী বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকদের অনেকেই। এদিকে শীতকালীন সময় হিসাবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২:৩০ টা পর্যন্ত চলার কথা। কিন্তু ১/২ জন চিকিৎসক ছাড়া ১০টা ১১টার আগে কোন চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। যদিও ১১ টার দিকে হাসপাতালে আসেন তাও অল্প সংখ্যক রোগী দেখে বেরিয়ে যান “টি-ব্রেকে”। তারপর আসেন একঘন্টা পরে। এদিকে ঘড়ির কাটা ২ টার ঘরে পৌছানো মাত্রই বেরিয়ে যান চিকিৎসকরা। সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের দৌড় ঝাপ করে রোগী দেখেন বলে জানিয়েছেন কিছু সংখ্যক ভুক্তভোগী রোগীরা। যে কয়টি রোগী দেখলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সুলতানপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ছকিনা খাতুন সহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান কোন রকমে ২টা বাজার সাথেসাথেই চিকিৎসকদের খুজে পাওয়া যায়না। তার সামনে যতই রোগী থাক না কেন। যে কারণে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষগুলো চিকিৎসকদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ