• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

বালাম বই চুরির হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

আপডেটঃ : বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আধুনিকীকরণের কল্যাণে আমাদের ভূমি অফিসগুলিতে সেবার মান আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক উন্নত হইয়াছে, ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু ভূমি অফিসে ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য আজও বন্ধ হয় নাই। অন্যের জায়গা-জমি দখলের উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির অন্যতম প্রক্রিয়া হইল বালাম বই চুরি করা। ইহার মাধ্যমে জমির মূল দলিল নষ্ট করিয়া ফেলা হয়। পরে সেই জমি দখলের চেষ্টা চলে নানাভাবে। এই বালাম বই চুরি একটি ভয়াবহ অপরাধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বই উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় ইহা ভূমি ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা ডাকিয়া আনে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের ঘটনা আগে যেমন ঘটিয়াছে, তেমনি এখনও ঘটিতেছে। সম্প্রতি ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিবন্ধন বিভাগের মহাফেজখানায় (রেকর্ড রুম) আবারও বালাম বই চুরির ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হইয়াছে। গত রবিবার ভোরে ঘটে এই ঘটনা। ঢাকা জেলার এই রেকর্ড রুম নজরদারির জন্য ১৫২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হইয়াছে। কিন্তু চুরির পর পর্যবেক্ষণ করিয়া দেখা গিয়াছে যে, বেশ কয়েকটি ক্যামেরার সংযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। আর কয়েকটি ক্যামেরার মুখ অন্যদিকে ঘুরানো। ইহাতে সরিষার মধ্যে ভূত থাকিবার মতো ভূমি অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ আছে বলিয়াও অনেকে ধারণা করিতেছেন। তবে অনেকগুলি সিসি ক্যামেরা থাকায় চোরদের শেষরক্ষা হয় নাই। বেশ কয়েকটি ক্যামেরায় অন্তত দুইজন চোরের কর্মকাণ্ড এবং তাহাদের অবয়ব ধরা পড়িয়াছে। এখন তাহাদের গ্রেফতার করিয়া বালাম বই চুরির চক্রের হোতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইতে হইবে অনতিবিলম্বে।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জায়গা-জমির দাম ক্রমবর্ধমান। ফলে এই ধরনের সম্পত্তির লোভ-লালসাজনিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বাড়িতেছে। বাড়িতেছে জমিজমা সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যাও—যাহা সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচিত। বিশেষ করিয়া ঢাকার রেজিস্ট্রেশন ভবনের রেকর্ড রুমের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে ১৭৯৪ সাল হইতে দলিল সংরক্ষণ করা হইতেছে। এই রেকর্ড রুম হইতে বিভিন্ন সময়ে বালাম বই চুরির ঘটনা ঘটিলেও কেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই তাহা আমাদের বোধগম্য নহে। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও জালিয়াতির অবসানে বালাম বই চুরি বন্ধ করা একান্ত দরকার। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংরক্ষণে কেবল সিসি ক্যামেরাই যথেষ্ট নহে। ইহার জন্য সশস্ত্র নিরাপত্তারও প্রয়োজন দেখা দিয়াছে। কিন্তু দুঃখজনক  হইলেও সত্য যে, রাতের বেলায় ঢাকার রেজিস্ট্রেশন ভবন পাহারা দেন মাত্র একজন নাইট গার্ড। ঢাকার ভূমি অফিসের যখন এই অবস্থা, তখন সারাদেশের ভূমি অফিসের রেকর্ড রুমের দুর্দশা বুঝিতে কোনো অসুবিধা হইবার কথা নহে। অনেক সময় এই ধরনের চোরের উদ্দেশ্য থাকে বালাম বই হইতে নির্দিষ্ট পাতা ছিঁড়িয়া নিয়া নির্দিষ্ট ভূমির প্রয়োজনীয় তথ্য গায়েব করিয়া দেওয়া। তাই এই অপরাধ প্রতিরোধে ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রুমগুলিতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন—ইহাই প্রত্যাশিত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ