• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

সর্বাগ্রে অভিভাবকদের সচেতন হইতে হইবে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮

ঢাকা শহরসহ সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘গ্যাং কালচার’ এবং তাহার জেরে নানা অপরাধ ক্রমশ বাড়িতেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বত্সর জানুয়ারি মাসে রাজধানীর উত্তরার নাইন স্টারের সদস্য আদনান কবির প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং ডিসকো বয়েজ সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়। সমপ্রতি চট্টগ্রাম ও খুলনায় একইভাবে প্রাণ হারায় দুই তরুণ। ঢাকার উত্তরায় আদনান হত্যার পর এই ব্যাপারে প্রশাসন নড়িয়া চড়িয়া উঠিলেও পরিস্থিতি যে বদলায় নাই গত বৃহস্পতিবার পুরাতন ঢাকায় দুইটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাহা প্রমাণিত হইয়াছে বলিয়া অনেকে মনে করিতেছেন। এইদিন লক্ষ্মীবাজারে একজন কলেজ ছাত্রকে এবং যাত্রাবাড়িতে একজন স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হইয়াছে। ধারণা করা হইতেছে, এই উভয় ঘটনায় গ্যাং দ্বন্দ্ব কাজ করিয়াছে। বিশেষত যাত্রাবাড়ীতে ছোট-বড় আর আধিপত্যের দ্বন্দ্বে খুন হইয়াছে স্কুলছাত্রটি। স্থানীয় লোকজনের সম্মুখেই ঘটনাটি ঘটিয়াছে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে কেহ আগাইয়া আসেন নাই। কিশোর অপরাধীদেরও মানুষ আজ কতটা ভয় পাইতেছে তাহা ইহা হইতে সহজেই উপলব্ধি করা যায়। এইসকল বিপথগামী কিশোর ও গ্যাং সদস্য ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্মেও জড়িত। তাহাদের এই দৌরাত্ম্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ না করিয়া পারা যায় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বিশেষত শহরাঞ্চলে কিশোর ও স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মাঝে গ্যাং কালচার দেখা দিতেছে যাহা তৈরি করিতেছে নূতন এক সংকট। ঢাকা শহরের উত্তরা, ধানমন্ডি ও গুলশানে রহিয়াছে নানা গ্যাং। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়াই ইহা গঠিত। সাধারণত বিভিন্ন ভৌতিক সিনেমা-নাটক ও ভিডিও গেমসের নামানুসারে গ্যাং দলের নামকরণ করা হয়। প্রথমে সেইসকল নাটক-সিনেমা ও ভিডিও গেমসের চরিত্রের অনুকরণে তাহাদের মধ্যে হিরোইজম ও অ্যাডভেঞ্চারিজম তথা বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের মানসিকতা তৈরি হয়। ইহা হইতেই একসময় তাহারা নিজেরা যেমন নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়াইয়া পড়ে, তেমনি জড়াইয়া পড়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও। আমরা জানি, সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা, দারিদ্র্য, বৈষম্য প্রভৃতি কারণে সমাজে অপরাধকর্ম বাড়ে। কিন্তু গ্যাং সংস্কৃতির প্রভাবেও যে কিশোর অপরাধ বাড়িতে পারে এবং তাহারা একসময় দাগী অপরাধীতে পরিণত হইতে পারে, তাহা এইসকল ঘটনা পর্যালোচনা না করিলে বোঝা যাইবে না। আধুনিক যুগে সন্তান-সন্ততিদের প্রতি পিতামাতার পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারা, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সমাজের নানা দ্বন্দ্বে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাওয়া, সহনশীলতার শিক্ষার অভাব, নানা প্রকার হতাশা, অভিভাবকদের অসচেতনতা, নাটক-সিনেমার ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি কারণে উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে গ্যাং সংস্কৃতি ও অপরাধমনস্কতা বাড়িতেছে। কেহ কেহ আবার ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ কর্তৃক ব্যবহূতও হইতেছে। যেহেতু আইনে কিশোর অপরাধীদের শাস্তি কিছুটা শিথিল, তাই তাহারা ইহার সুযোগ নিতেছে। অতএব, সর্বাগ্রে অভিভাবকদেরই সচেতন হইতে হইবে। সন্তানের নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে হইবে। তাহাদের দিতে হইবে নৈতিকতা ও সহনশীলতার শিক্ষা। সর্বোপরি, এই ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ, সমাজসেবক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সজাগ ও সতর্ক থাকিতে হইবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page