• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

এইগুলি নিছক দুর্ঘটনা নহে

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

বাসার বারান্দা হইতে পাখি দেখিয়া হাত বাড়ায় ৭ বত্সরের একটি শিশু। কিন্তু পাখিটি বসা ছিল ১১ কিলোভোল্টের (কেভি) একটি বৈদ্যুতিক তারের ওপর। শিশুটি পাখিটিকে ধরিতে গিয়া বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হইয়া পড়ে। ঘটনাটি ঘটিয়াছে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায়। গুরুতর আহত ওই শিশুটি এখনো সুস্থ হইয়া উঠিতে পারে নাই। বিদ্যুতায়িত খুঁটি ও তারের সংস্পর্শে আসিয়া প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হইতেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ।

বিদ্যুত্ ব্যবহার করিতেছে প্রায় পৌনে তিন কোটি গ্রাহক। সারাদেশে ১০ হাজার ৬২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন এবং চার লক্ষ ২৯ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ বিতরণ লাইন রহিয়াছে। নিয়ম রহিয়াছে প্রতিটি বৈদ্যুতিক টাওয়ারের চারদিকে ‘এন্টি ক্লাইম্বিং ডিভাইস’ দিয়া নিরাপদ রাখিবার। কিন্তু ইহার ব্যত্যয়ই যেন নিয়ম হইয়া গিয়াছে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, বিদ্যুতায়িত খুঁটি ও তারের স্পর্শে গত ৬ মাসে সাড়ে চার শত দুর্ঘটনায় মৃত্যু হইয়াছে দেড় শতাধিক মানুষের। অথচ এই ব্যাপারে বিদ্যুত্ বিতরণকারী সংস্থাগুলির নিকট সঠিক কোনো তথ্য নাই। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে অত্র বিভাগে চিকিত্সা নেওয়া ২৮ শতাংশ রোগীই বাড়ির আশেপাশে টানানো তারে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হইয়া দগ্ধ ও আহত হইয়াছেন। এবং ১৯ শতাংশই বৈদ্যুতিক খুঁটির তার ছিঁড়িয়া দুর্ঘটনায় পড়িয়াছেন। তাহা ছাড়া, ২০১৬ সালে দগ্ধ মৃত রোগীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ছিলেন বিদ্যুত্স্পৃষ্টের শিকার। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনের তার উন্মুক্ত থাকে। বহু ক্ষেত্রেই ১১ কিলোভোল্ট (কেভি) বা ৩৩ কেভির এই লাইনগুলি বসতবাড়ির পাশ দিয়া চলিয়া গিয়াছে। কোথাও কোথাও চলিয়া গিয়াছে ফসলের খেত বা হাট-বাজারের উপর দিয়া। বড়গাছের ভেজা ডালপালা এইসকল তারের স্পর্শে আসিয়া বিদ্যুতায়িত হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, বিতরণকারী অফিসের কর্মীরা এইগুলি রক্ষণাবেক্ষণে খুব কমই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ বিদ্যুত্কর্মীই বিদ্যুত্লাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত টহলের গুরুত্ব বুঝিতে চাহেন না। ফলে বন্ধ হইতেছে না প্রতিরোধযোগ্য এই দুর্ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, এইগুলি নিছক দুর্ঘটনা নহে। নিরাপত্তার মানদণ্ড না মানিয়া বিদ্যুত্ লাইন সমপ্রসারণ ও সংযোগ দেওয়ার কারণেই ঘটিতেছে এমন দুর্ঘটনা। স্পষ্টতই, নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইলে এই ধরনের দুর্ঘটনার লাগাম টানিয়া ধরা সম্ভব। বসতবাড়ি হইতে নির্দিষ্ট দূরত্বে নূতন বিদ্যুত্সঞ্চালন লাইন নির্মাণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইহা পুরোপুুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হইলে সেই ক্ষেত্রে সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখিতে হইবে। আশার কথা হইল, নূতন সংযোগে ইনসুলেটেড তথা বিদ্যুত্ অপরিবাহী আবরণযুক্ত তারে সংযোগ দেওয়া হইতেছে। পুরাতন সংযোগগুলিও ইনসুলেটেড তারে রূপান্তরের চেষ্টা চলিতেছে। ভূগর্ভস্থ বিদ্যুত্ লাইন নির্মাণের প্রকল্পও গ্রহণ করা হইয়াছে। ইহার পাশাপাশি আবরণহীন বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনের সন্নিকটে ঘনঘন সতর্কবার্তা রাখা জরুরি, যাহাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়িয়া ওঠে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ