আলিফ হোসেন(তানোর) প্রতিনিধি॥
রাজশাহীর তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় খরা মৌসুমের শুরুতেই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে অদুর ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিবে। এধরনের সমস্যার কথা অনেক আগে থেকেই পরিবেশবাদিরা বলে আসছিলেন। ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার বিগত এক যুগে দ্বিগুনের বেশি নিচে গেছে। অনেক আগে থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখন মিলছে না জমিতে সেচ দেয়ার পানিও। পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে এ বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক গভীর নলকুপ। সেচ সংকটে কয়েক হাজার হেক্টর জমি পতিত পড়ে আছে চলছে চৈত্র মাসে ধুধু খরা। গতকাল সোমবান সরেজমিন দেখা গেছে, হাতে বালতি-কলস ও হাড়ি-পাতিল নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক সাঁওতাল নারী-পুরুষ ও শিশুরা খাবার পানির জন অপেক্ষা করছেন। বেশ কিছুক্ষণ পরে এক ব্যাক্তি তার বাড়িতে বসানো সাবমার্সেবল পাম্প থেকে প্রায় পাঁচশ গজ ফিতা পাইপের মাধ্যমে অপেক্ষমাণ ব্যাক্তিদের পানির লাইন দিলে তারা খাওয়ার পানি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এই দৃশ্য বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলার মু-ুমালা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের মাহালি পাড়া গ্রামের। গ্রামবাসীরা জানান,এখানে বিএমডিএ’র একটি গভীর নলকূপ ভূ-গর্ভস্থর পানির স্তর নিচে নামাই ১০ বছর যাবত পানির অভাবে বন্ধ হয়ে আছে আবার পৌরসভার দেয়া দুইটি সাবমার্সেবল পাম্প ও তিন বছর ধরে পানি না উঠায় বন্ধ। গ্রামে ছোট বড় চারটি পুকুর আছে। চৈত্র মাস পড়তে না পড়তেই পুকুরের পানি তলানিতে। তবুও পচা দুর্গন্ধ। এখন গ্রামবাসীর খাওয়ার পানির ভরসা একব্যাক্তির বাড়িতে বসানো একইঞ্চি পাইবের সাবমার্সেবল পাম্প। তাও গুণতে হয় মাথাপিচু মাসিক ১০ টাকা।
জানা গেছে, তানোর উপজেলার মাহালিপাড়ার গ্রামেই শুধু খাবার পানির সঙ্কট নয়, এই পানি সংকট এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। চৈত্র মাস পড়তে না পড়তে খাল-বিল ও পুকুরে পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই এলাকার অধিকাশ খাল-থাড়ি ও পুকুর ফেটে চৌচির। গৃহপালিত পশুর গোশল করানো থেকে বাড়ির হাড়ি-পাতিল মাজা ঘোষা সবই করতে হচ্ছে দুরদুরান্ত থেকে কেনা আনা পানিতেই। যার ফলে এসব গ্রামে এখন চলছে পানির হাহাকার। তানোরের মুন্ডুমালা পৌর এলাকার মুন্ডুমালা মৌজা অবস্থিত বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপরেটর মাহাবুর রহমান জানান, বিএমডিএ আওতাধীন তার গভীর নলকূপটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে এই নলকূপের এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা ফসলি জমি পতিত পড়ে রয়েছে। অথচ কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনের জন্য বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে বিগত আশির দশক থেকে বিএমডিএ’র গভীর নলকুপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়। সেই পানি ব্যবহার করে খরা মৌসুমে পতিত থাকা জমিগুলোকে আনা হয়েছিল চাষের আওতায়। কিন্তু অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলনের ফলে এখন কুফল দেখা দিয়েছে। তানোরের মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী জানান, বোরো মৌসুমে বেশি মাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে প্রতি বছর গড়ে দুই ফুট করে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটি হওয়ার কারণে পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি আরো জানান,এ অঞ্চলে হস্তচালিত টিউবয়েল ও কূয়া প্রায় ১০ বছর আগেই আগেই পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সাবমার্সেবল পাম্প বসানো হলেও এক দুই বছরের মধ্যে আর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাওয়ারসহ প্রয়োজনীয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। মেয়র আরো জানান,বরেন্দ্র অঞ্চল কে বাচাতে সরকারকে খুব দ্রত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিকল্প উপায়ে নদী থেকে পানি এনে ও প্রচুর পরিমানে পুকুর -ক্রসড্যাম খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংক্ষেণ করে সেচ কাজে ব্যবহার করলে এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান,বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক উচু এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামাই একটু পানির সংকট আছে। তবে,সরকার সেচ কাজে পানি ব্যবহারের বিকল্প উপায়ের চেষ্টা করছে।
You cannot copy content of this page