• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৭ অপরাহ্ন

ভোলায় ভুয়া কাগজে অর্ধ শতাধিক বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দুই প্রতারকের কোটি টাকার বানিজ্য

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

বিপ্লব রায়(ভোলা) প্রতিনিধি

ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রায় অর্ধ শতাধিক বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দুই প্রতারক কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সরকারের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা করা হয়নি । বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বাড়ির ভিতরে  এবং বাগানের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি  যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয়ের কোন রাস্তাও নেই । আর এসব বিদ্যালয় স্থাপনের নেপথ্যে রয়েছে মাকসুদুরহমান ও নোমান নামের দুজন প্রতারক। এরা  দুজন শিক্ষক পরিচয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতারণা করে  কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে । এসব করে তারা কুয়াকাটা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সস্পদের পাহার গড়ছে । তৈরি করেছে আলীশান বাড়িও । তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে , দৌলতখান  উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৪২ নং  দক্ষিণ পশ্চিম মধ্য কলাকোপা সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুরহমান ও উত্তর  দিদারউল্লাহ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লা আল-নোমান ভুয়া দলিলে সরকারী কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন যায়গায় প্রতারনার মাধ্যমে ২০০৯ সালের পূৃর্বের  কাগজপত্র  দেখিয়ে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে আসছে । নোমান যেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছে এই বিদ্যালয়টিও পূর্বে  সতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা  হিসেবে বিদ্যমান ছিল। স্থানীয়রা জানান, পুর্বের মাদ্রাসার দলিল ও সকল কাগজপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মাদ্রাসার দলিলের পরিবর্তে  বিদ্যালয়টি স্থাপন করে নোমান। জানাগেছে,  দুই প্রধান শিক্ষক মাকছুদুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল- নোমান বিভিন্ন যায়গায় গিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ব করে তাদের দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতিষ্ঠান প্রতি ১৪/১৬ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে । সরকারের নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন বাড়ির ভিতরসহ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত যায়গায় বিদ্যালয় তৈরি করে প্রায় ৩ কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নিয়েছে  তারা । এর মধ্যে শুধু দৌলতখান উপজেলাতেই তারা ২২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছে। অন্য উপজেলায় একই নিয়মে কমবেশি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকার প্যারেড স্কয়ার মাঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  ব্যাপক যাচাই বাছাই পর  ২৬,১৯৩ টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার ঘোষনা দেন।  তিনি বলেন,এই ঘোষনার পর বাংলাদেশের কোথাও আর কোন বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবেনা। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সরকার সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিদ্যালয় স্থাপন করবে । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন কোন  বিদ্যালয় স্থপনের সরকারের  অনুমোতি না থাকলেও ২০১৭ সালের শেষ সময় এবং ২০১৮ সালের প্রথম দিকে অবৈধপন্থায় ব্যাঙ্গের ছাতারমত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে । আর এসব বিদ্যালয়  তৈরি করতে গিয়ে আগেই যেন বৈধতা দিচ্ছে প্রতারক চক্রটি । জানা গেছে,২০০৯ সালের আগের তারিখ দেখিয়ে  এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানসহ বিভিন্ন কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে কাগজপত্র তৈরি করে দিচ্ছে সুচতুর মাকসুদুর রহমান ও নোমান। নিজেদেরকে বিশ্বস্ত করতে কোন কোন জায়গায় তারা দৌলতখান উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহি অফিসার কামাল হোসেন তাদের কর্মকান্ডে সরাসরি জড়িত বলে জাহির করতেন । তবে  কেউ তাদের প্রতারণার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে  সকারদলীয় লোক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দাবিয়ে রাখে। এদিকে সরেজমিনে গিয়ে
> দেখা যায়, যে সমস্ত বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে তার কোন প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি নেই । অনেক প্রতিষ্ঠানে অতি পিছনের দিন তারিখ দেখিয়ে কাগজপত্র  ও সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। এসব অনিয়মের  বিষয়ে  এক সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশের উদ্দোগ নিলে দৌলতখান উপজেলা সদ্য বিদায়ী  নির্বাহি অফিসার কামাল উদ্দিনকে দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে প্রতারক মাকসুদুর রহমান । আবার মাকসুদুর রহমানের কাছে ওই সাংবাদিক দুই লক্ষ টাকা চাঁদা চেয়েছে বলেও প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। অবৈধ পন্থানুসরণ করে যেমন  বিদ্যালয় স্থাপন করেছে, তেমনি  শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও চরম অনিয়ম করেছে তারা। প্রায় শিক্ষকের কাগজপত্রের বয়সই হয়নি। অথচ তাদের নিয়োগ দিয়েছে  বলে জানাগেছে।  বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, প্রতারক মাকসুদুর রহমান ও নোমান প্রতিদিনই কোন না কোন জায়গায় নতুন নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চিঠপত্র নিয়ে আসছে। তবে তাদের  সকল কাগজপত্রই জাল স্বাক্ষরে রুপান্তর করা বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে।  এ ব্যপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার জানান,আমাদের কাছে অনেকগুলো বিদ্যালয়ের কাগজপত্র পেইন্ডিং আছে। সকল কাগজপত্র যাচাই বাছই  করে বোর্ড বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরেজমিনে তদন্তপুর্বক কোন কোন  প্রতিষ্ঠান কি পর্যায়ে আছে তা উদঘাটন করা হবে। মন্ত্রনালয়ে তালিকা কখন পাঠানো হবে তা বলা যাচ্ছেনা।  তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের দলিল সঠিক আছে কি না তা জানতে সাব রেজিস্টার কে চিঠি দেয়া হবে। অভিযুক্ত শিক্ষক  মাকসুদুর রহমান এর বিদ্যালয়ে গিয়ে টাকার বিনিময়ে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থপনের বিষয়ে জানতে চাইলে  তিনি কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সাথে জড়িত নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর বাহিরে আর কোন কথা বলতে  রাজি হয়নি। আর নোমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে গত কয়েক দিন ধরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ