• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন

আসল আওয়ামী লীগ ও হঠাৎ আওয়ামী লীগ মূখোমূখি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮

তানোর রাজশাহী প্রতিনিধি॥
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকার রাজনীতির মাঠে আসল আওয়ামী লীগ (আদর্শিক) ও হঠাৎ আওয়ামী লীগ (হাইব্রিড) পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে জম্পেশ প্রচার-প্রচারণা ও মূখোমূখি অবস্থানে রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এদিকে আসল ও হঠাৎ আওয়ামী লীগের পরস্পরবিরোধী বা মূখোমূখি অবস্থানে তৃণমূলের রাজনীতিতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে এক সময় সম্পৃক্ত বা সখ্যতা ছিল, অথবা যাদের রাজনৈতিক জীবনটাই পালাবদলের এবং সুবিধাবাদী তৃণমূলে বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা নাই এমন হাইব্রিডদের (হঠাৎ আওয়ামী লীগ) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, আর পারিবারিক ও বংশপরম্পরায় যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে রাজনীতির প্রতিকুল পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বা সুবিধা পেতে দলের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য দলে ভিড়েনি তাদের আসল (আদর্শিক) আওয়ামী লীগ বলে চিহ্নিত করেছে। এদিকে হঠাৎ আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতন ও দ্বৈতশাসনে তৃণমূলের হাঁসফাঁস অবস্থা রীতিমতো কোনঠাসা হয়ে উঠেছে আসল আওয়ামী লীগ। আদর্শিকদের নেতৃত্বে রয়েছে গোলাম রাব্বানি ও হাইব্রিডদের নেতৃত্বে রয়েছে রাব্বানিবিরোধী শিবিরের জৈষ্ঠ নেতা তবে ইতমধ্যে তারা তৃণমূলে অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অথচ আসল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চরম দূর্দীনে থাকলেও হঠাৎ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ভাগাভাগী, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, গভীর নলকুপ অপারেটর বাণিজ্য ও তদ্বির বাণিজ্যসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করে রাতারাতি ফুঁলেফেঁপে উঠে জেঁকে বসেছে নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এরা এখন আওয়ামী লীগের ভিতরে থেকে আওয়ামী লীগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এরা কেউ আওয়ামী লীগের নীতি মানে না, নৈতিকতা বা আদর্শও বোঝে না এলাকায় এদের রয়েছে তৃতীয় বাহিনী। কেউ দূর্নীতিবাজ, কেউ নাপিত, কেউ হকার, কেউ কালোবাজারি ও কেউ জনবিচ্ছিন্ন বগি নেতা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হতে পারবে না অথচ নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করছে এদেরই তৃণমূলে বলা হচ্ছে হঠাৎ আওয়ামী লীগ (হাইব্রিড)। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, আসল আওয়ামী লীগ আর হঠাৎ আওয়ামী লীগের পার্থক্য বুঝতে হলে নারায়নগঞ্জ আর রংপুর সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনের চিত্র দেখতে হবে। নারায়নগঞ্জে শামীম উসমান জাত (আসল) আওয়ামী লীগ তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও দলের মনোনিত প্রার্থীর বিপক্ষে না গিয়ে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভির পক্ষে ভোট করেছেন। আর রংপুরে হঠাৎ আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করতে আদাজল খেয়ে পিছে লেগেছে। আসল আওয়ামী লীগ চিন্তা করে দলের স্বার্থ আর হঠাৎ আওয়ামী লীগ চিন্তা করে ব্যক্তি স্বার্থ। ফলে হঠাৎ আওয়ামী লীগ এখন আওয়ামী লীগের বড় শত্র“।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকার সময়ে যারা নানা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছে ও লোভ লালসায় আদর্শচ্যুত না হয়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরে রেখেছিলেন, যারা ব্যক্তি স্বার্থ ও অর্থলিপ্সার কাছে মাথা নত করে দলছুট হয়নি বরং দলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছিলেন তৃণমূলে এদেরই আসল আওয়ামী লীগ (আদর্শিক) বলা হচ্ছে। অথচ এখানে আসল আওয়ামী লীগ রীতিমতো কোনঠাসা উঠেছে হঠাৎ আওয়ামী লীগের কাছে। ফলে আসল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের সূচনা হয়েছে এক পক্ষ (হঠাৎ আওয়ামী লীগ) সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষক-কর্মচারি, ভাড়াটিয়া বা বহিরাগত নেতা (বক্তা) ও বিভিন্ন বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নিয়ে আমলা নির্ভর রাজনীতি করে তৃণমূলে জনবিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। অপরপক্ষ (আসল আওয়ামী লীগ) তৃণমূলের পা-ফাটা কৃষক-শ্রমিক, আম-জনতা তথা সাধারণ মানুষ নিয়ে প্রচার-প্রচরণা ও মতবিনিময় করে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরী করেছে। তৃণমূলের বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যে আসল আওয়ামী লীগের মেধাবী ও তরুণ নেতৃত্ব উেপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গালাম রাব্বানির পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ, পারিবারিক ও সামাজিক পরিচিতি এবং যেই জনপ্রিয়তা রয়েছে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে এসবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিপুল জনসর্মথন ও বিশাল কর্মী-বাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আগামিতে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে হঠাৎ আওয়ামী লীগের আমলা নির্ভর রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। তাদের অভিমত, আওয়ামী লীগ হলো গণতন্ত্রের ধারক-বাহক, উন্নয়ন-শান্তি ও অগ্রগতির প্রতিক, অসম্প্রদায়িক দরিদ্র, নীপিড়িত, নির্যাতিত ও সাধারণ মানুষের আশ্রয় স্থল। অথচ এসব সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করে হঠাৎ আওয়ামী লীগের আমলাতান্ত্রিক তথা শিক্ষক-কর্মচারি নির্ভর রাজনীতি রাজনৈতিক পর্যক্ষেক মহলকে হতাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে নির্বাচনী এলাকায়র প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষক-কর্মচারি জামায়াত-বিএনপি মতাদর্শী যাদের ভোট আওয়ামী লীগ কখনই আশা করতে পারে না। তাহলে কোনো তাদের নিয়ে কি উদেশ্যে এমন রাজনীতি, তবে কি ? আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, না কি কোনো জনবিচ্ছিন্ন বগি নেতার কূটকৌশলে এসব করা হচ্ছে। তৃণমূলের অভিমত, এমন আমলতান্ত্রিক (শিক্ষক-কর্মচারি) সমাবেশ বা রাজনীতি না করে বরং আওয়ামী লীগের তৃণমূলে যে সকল প্রবীণ-ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী নানা কারণে নিস্ক্রীয় রয়েছে তাদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হলে দল সাংগঠনিকভাবে বেশি লাভবান হতো। তৃণমূল উপেক্ষা করে আমলাতান্ত্রিক রাজনীতি করায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জনবিচ্ছিন্ন বগি নেতা বা হঠাৎ আওয়ামী লীগাররা পকেটভারী করতে পারছে বলে মন্তব্য তৃণমূলের। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যাযনি।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page