• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

‘কিছু ব্যক্তির কাছে মাথানত করলে দুদকের দরকার কি’

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেংকারির মামলায় ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করা ও তদন্ত বিলম্বে আবারো উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। ওই পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের ধরতে না পারায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তীব্র সমালোচনা করে আদলত।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, কিছু ব্যক্তির কাছে যদি আপনারা মাথানত করেন তাহলে এ ধরনের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান (দুদক) থেকে লাভ কি? বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, ঋণ যাচাই-বাছাই কমিটির নেতিবাচক প্রতিবেদনের পরেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। সবাই মিলে ব্যাংক লুটপাট করে খেয়েছে। এরপরেও ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। এরা সবাই ‘কিং ফিশ’ (রাঘব বোয়ল) বলেই কি ধরা যায় না, ছোয়া যায় না।
আদালত বলেন, আমরা এত আদেশ-নির্দেশ ও পর্যবেক্ষল দিচ্ছি কিন্তু দুদক তাতে কর্ণপাত করছে না। তাহলে আমরা এতদিন উলুবনে মুক্ত ছড়িয়েছি? এখন আমাদের নিজেদেরই মনে হচ্ছে ‘কালো কাপড়ে’ মুখ ঢেকে ফেলি। এ সময় হাইকোর্টে বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেংকারির ৫৬ মামলার ৮ তদন্ত কর্মকর্তা ও দু’জন সমন্বয়কারী উপস্থিত ছিলেন। হাইকোর্টের তলব আদেশে তারা বুধবার আদালতে হাজির হন।
আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে তদন্ত কর্মকর্তাদের অন্যতম সমন্বয়কারী দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, কমিশনের কাছ থেকে আমরা কিছু নির্দেশনা পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু তদন্ত কর্মকর্তা বদলিও হয়েছেন। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা এসেছেন। পরিচালনা পর্ষদের ১৩ জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নথিপত্রের সঙ্গে তাদের বক্তব্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তদন্ত শেষ হওয়ার পথে। তবে কমিশনের অনুমোদন না নেয়া পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে না। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, তাহলে কি আমরা কমিশনকে ডাকব? তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলছেন-এটা কি সেই ছোট গল্পের মত। শেষ হয়েও হইল না শেষ। তদন্তের বিলম্বে আমরা হতাশ। আড়াই বছর হলো এখনো তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেননি। লোকবলের অভাব থাকলে ৫/৬টি মামলার তদন্ত করতেন।
সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত হয়েছে এটা প্রমাণিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করেছি। আদালত বলেন, একজন কৃষকের বিরুদ্ধে ৫ হাজার টাকার সার্টিফিকেট মামলা হলে তো কোমরে রশি বেধে নিয়ে আসেন, তাহলে এখানে যারা ঋণ গ্রহীতা ধরছেন না কেন? দুদক কর্মকর্তা বলেন, এরা প্রতিনিয়ত ঠিকানা পরিবর্তন করায় এদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে। আদালত বলেন, এ ধরনের ব্যক্তিদের তো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায়। টক শোতে তারা অংশ নেয়। ব্যাংকের এত অর্থ আত্মসাত হলো আর সেই ঘটনায় তদন্ত সংস্থা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারায় আমরা হতাশ।
আদালত বলেন, আড়াই বছর সময় নিয়েও কেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আসামি করছেন না? পরিচালনা পর্ষদ তো পুরো ব্যাংকেরই জিম্মাদার। দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, আজকেও ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আদালত বলেন, একজন ব্যক্তিকে (বাচ্চু) কতবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। আদৌও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে কি? এটা কি অর্থ পাঁচারের মামলা যে টাকা কোথায় গেলো খুজতে হবে? ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত হয়েছে নথিপত্রে সব উল্লেখ রয়েছে। তাহলে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব কেন? আদালত বলেন, আপনাদের নির্লিপ্ততার কারনে যদি জেলে থাকা আসামিরা জামিন নিয়ে বের হয়ে যায় সেটা দুঃখজনক।
দুদক কৌঁসুলি সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, হাইকোর্টের এ ধরনের পর্যবেক্ষণ দুদককে গড়তে সাহায্য করছে। আদালত বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট থাকে। এ কারণে সবার সহযোগিতা দরকার।
গত ২৩ মে বেসিক ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ফজলুস সোবাহানের জামিন শুনানিকালে হাইকোর্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে তলব করে। ফজুলস সোবহানের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহদমুদ বলেন, ফজুলস সোবহানের কোন ক্ষমতাই নেই ঋণ অনুমোদনের। এরপরেও তাকে ৪৮টি মামলার আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে অভিযোগ একই ধরনের। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে যদি তার সাজাও হয় তা সর্বোচ্চ এক বছরের, কিন্তু প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে সে জেল হাজতে আছে। এরপরই হাইকোর্ট ফজলুস সোবহানের ৬ মামলা এবং সিপার আহমেদের ৩ মামলায় করা জামিন আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখেছেন।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page