• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন

কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীদের সনদ আটকে টাকা আদায়

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সরকারী হাসপাতালে রোগীদের বিনা মূল্যের সনদ আটকে রেখে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু ধনী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে সনদ নিলেও সবচেয়ে বেশি বিপদে সম্মুখিন হচ্ছেন অসহায় গরীব রোগী ও তাদের পরিবার। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রোগী, তাদের পরিবার ও উপজেলা ও পৌরবাসী। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ দুর্নীতি থেকে পরিত্রান চান তারা।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, গ্রাম, মহল্লা ও কালিয়াকৈর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড, মহল্লা থেকে লোকজন চিকিৎসা নিতে সরকারী এ হাসপাতালে আসে। সাধারন রোগীর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি-হানাহানিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও বিভিন্ন চাকুরিতে যোগদানের আগে নিজেদের সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল পরিক্ষাও করিয়ে থাকেন। এসব রোগীদের কারো কারো পরিবার মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত হলেও বেশির ভাগ লোক নি¤œবিত্ত নিরিহ অসহায়। অথচ এ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সনদ বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। রোগীদের সনদ আটকে রেখে ৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। মারামারি-হানানানিসহ বিভিন্ন পুলিশি মামলার রোগীদের সনদ আটকে রেখে সুযোগ বুঝে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। কখনো কখনো ওই সনদ আটকে রেখে ওই হাসপাতালের অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম ওই টাকা আদায় করছেন। তার সঙ্গে অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে আরো বেশি টাকাও আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কখনো নিজেরা কখনো বা দালালদের মাধ্যমে ওই টাকা আদায় করে। তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে রোগী বা তার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেয় দালাল ও কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম। একটু আঘাত বা ফেটে গেলেও এটেন টু মার্ডার মানে ৩২৬ ধারায় সনদ দেওয়া হবে বলেও তারা জানান। ভয়ে বাধ্য হয়েই মারামারি-হানাহানি মামলায় জেতার জন্য দর কষাকষির এক পর্যায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন দাবী অনুযায়ী টাকা দিয়ে তাদের সনদ তোলেন। বিপাকে পড়েন অসহায় গরীব রোগী বা তার পরিবার। অল্পকিছু টাকা নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাছোরবান্দা, টাকা না দিলে বিভিন্ন অযুহাতে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মোসলেম উদ্দিন ও তার ছেলে স্বপন এ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসা শেষে তাদের সনদ নিতে আসেন মোসলেম উদ্দিন। তিনি জানান, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার প্রবীর প্রথমে তাকে জানায়, থানা থেকে লিখিত আনতে হবে। এছাড়া চিকিৎসক বোর্ড গঠনসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখান। এরপর জাহাঙ্গীর আলম নামে হাসপাতালের এক কর্মচারী দুটি সনদের জন্য ১২ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে তিনি ওই মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে গোপনে কথাবার্তা বলে সনদ দিবে বলে ঠিক করেন। এক পর্যায় তিন ধাপে ২ হাজার ৭০০ টাকা দিলেও বাকী টাকা দিতে না পারায় তাকে সনদ দেননি। বাকী টাকা আদায় করতে ওই কর্মচারী তাকে জানায়, টাকা দিলে এটেন টু মার্ডারের ৩২৬ ধারায় সনদ দেওয়া হবে না। এ ধারায় সনদ না দিলে জামিন হবে না, উল্টো তাকে জেলে আটকে দিবে। অবশেষে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে সনদ হাতে পান তিনি। অপর এক নারী ফিরোজা বেগম জানান, একটি সনদের জন্য ছুটির কাগজ হতে নিয়ে চিকিৎসকদের দরজায় দরজায় কড়া নেড়েও কারো সাড়া মেলেনি। সনদ লেখক কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে গেলে অনেক বেশি টাকা দাবী করেন। আমার কাছে অতো টাকা নেই। মাত্র ১০০ থেকে দেড়শত টাকা আছে, সে টাকাও দিতে চাইলাম। আমার কথা কেউ শুনছে না। শুধু মোসলেম উদ্দিন ও ফিরোজা বেগমই নয়, হাসপাতালে আসা প্রায় সব রোগীই এমন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এভাবে রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ দুর্নীতি থেকে পরিত্রান চান তারা। তবে অভিযুক্ত অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, থানা থেকে চিঠি আনতে বলি। সেটি আনলে সনদ দিয়ে দেই।
ওই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. প্রবীর জানান, সনদের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ খায়রুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page