• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

ঈদযাত্রায় প্রাণ ঝরেছে চার শতাধিক, আহত ১২৭৪

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

ঈদ করতে বাড়ি গিয়ে এবং কর্মস্থলে ফেরার পথে এবার সড়কেই প্রাণ হারিয়েছে ৪০৫ জন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৪ জন। সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব  মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদ যাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ পথে দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি গত চার বছর যাবত্ পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
এবার ঈদের আগে যাত্রাপথে সকল তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৩ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২ জন নিহত এবং ১৫০ জন আহতের খবর সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হলে তা পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ২৩ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত এবং ১২৬৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ-পথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছেন। রেল পথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানানো হয়।
এ সব দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৮.৮৯ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২.২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩.০৬ শতাংশ ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৮.৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫.২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
মোট দুর্ঘটনার ৩৪.০২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩২.৭২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৩.২৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ০.৭৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে ও ১৮.২০ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন বা বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল, মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা ও সড়ক-মহাসড়কে বেহালদশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জোতির্ময় বড়ুয়া, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরামর্শ : সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি থেকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো: জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা, প্রশিক্ষিত চালক পেতে জাতীয় পর্যায়ে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি, নিয়মিত সড়কের রোড সেফটি অডিট করা, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু, মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা লেন করা, মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা বন্ধে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত করা, ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাত-আন্ডারপাস-ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page