জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ঢালাওভাবে শিল্পাঞ্চল স্থাপন না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পাশাপাশি নতুন করে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের আর্থিক সামর্থ্য, ব্যাংক ঋণ, ব্যবসার সুনাম যাচাই করার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় এমন নির্দেশনা এসেছে। গত ২৭ মে অনুষ্ঠিত ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভায় মোট ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও ৪টি সরকারি এবং ৬টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকালে ব্যক্তিমালিকানাধীন একাধিক ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি আছে, এমন জমি যথাসম্ভব পরিহার করে খাস জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে প্রদানকৃত লাইসেন্সভুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপন ও অপারেশন নিশ্চিত করার পর পুনরায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আবেদন বিবেচনা করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখন থেকে সাধারণত একশ একর জমি রয়েছে এমন প্রস্তাব বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর আগে আবেদনকারীর জমির পরিমাণ, আর্থিক সামর্থ্য, ব্যাংক ঋণ ব্যবসার সুনাম যাচাই করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক যাচাই-বাছাই করছি। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনুমোদন পাওয়া ৬টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুইশ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে এবং ১৩ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনে তাই আরো সতর্ক হতে প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাস বা পতিত জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এরপরেও এসব খাস জমিতে যে কয়টি পরিবার পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকেও পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সারাদেশের জন্য জোন প্লানিং অতিদ্রুত সম্পন্ন করা হবে। পরিকল্পিত অঞ্চলেই অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। সকলকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বেজা সূত্রে জানা যায়, বেজা গভর্নিং বোর্ড দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এযাবত্ ৭৯টি স্থানে মোট ৭৯ হাজার ২০৮ একর জমির উপর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সরকারি ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ভিত্তিক (পিপিপি) অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের বেশির ভাগ খাস জমি বন্দোবস্ত গ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বেজা স্বল্প মেয়াদে ১৮টি প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য পাঁচ বছর মেয়াদে একটি ‘বেজা অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। গভর্নিং বোর্ডের সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে এ ধরনের তহবিল গঠনের সুযোগ নেই। এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে হ্রদ বা জলাধার নির্মাণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মিতব্য প্রত্যেক ভবনের বৃষ্টির পানি জলাধারে সংরক্ষণ করে অগ্নি নির্বাপণ কাজসহ এই পানির বহুমুখী ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। মিরসরাই-কক্সবাজার নির্মিতব্য মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে খাস জমি চিহ্নিত করে তাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সভায় উল্লেখ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীগণ পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ নিয়ে শুধু রিফাইনারি স্থাপন করেন। তিনি পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপনের নামে যাতে শুধু রিফাইনারি স্থাপন করা না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেন।
সভায় আগারগাঁয়ে নিজস্ব জমিতে বেজার বহুতল বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী এই মুহূর্তে বেজার নিজস্ব ভবন তৈরি না করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।