অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ কারণে ডিআইজি মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নার সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে কমিশন। বুধবার কমিশন থেকে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। সেগুলোর ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানের জন্য সম্পত্তির বিবরণী দাখিল করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ডিআইজি মিজানকে সাত দিনের মধ্যে তার নিজের ও নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নাকেও তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দিয়েছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চাকরি জীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি, একাধিক ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থ ও ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ৩ মে মিজানকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পেয়েছে যে, ডিআইজি মিজানের ঢাকার সাভারে পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটিতে তার নিজের নামে পাঁচ কাঠা জমি রয়েছে। এছাড়া পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ৫ কাঠা, পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির অধীনে অ্যাডভান্স পুলিশ টাউনে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট ছাড়াও বরিশালের মেহেদিগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ৩২ শতাংশ জমিতে ২৪০০ বর্গফুটের দোতলা ভবন থাকার তথ্য দুদকের অনুসন্ধানে এসেছে।
অন্যদিকে, ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া রত্নার নামে উত্তরা রেসিডেন্সিয়াল মডেল টাউনে ১৭৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানার তথ্যও দুদকে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মিজানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপনের নামে রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে ২৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। মেহেদীগঞ্জের ওষুধ ব্যবসায়ী মাহবুবুরের এই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে তার বড় ভাই মিজানের বিনিয়োগ থাকতে পারে বলে দুদকের সন্দেহ। মিজানের ভাগ্নে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার এসআই মাহামুদুল হাসানের নামে নগরীর পাইওনিয়ার রোডে ১৯১৯ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট থাকার বিষয়টিও দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।