• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন

সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১৮

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি॥
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা। নামেই ৫০ শয্যা হাসপাতাল। নাজুক অব্যবস্থাপনায় চলছে সরিষাবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। রোগী আছে,  চিকিৎসক নেই ,খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দালালদের খপ্পড়ে পড়ে  নানা ধরণের হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।  হাসপাতালকে ঘিরে রয়েছে বেপরোয়া দালাল চক্র। দীর্ঘ নয় বছর ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকায় ছোট খাটো অপারেশনের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট  ক্লিনিকে। র্দীঘ দিন ধরে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে ন্ষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশায় চিকিৎসা নিতে আসা  রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রোগীদের সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সুবিধার জন্য রয়েছে এই ৫০ শয্যার একটি মাত্র হাসপাতাল। দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক সংকট নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে পুরুষ-মহিলা ওর্য়াড মিলে ৫০ শয্যা  থাকার কথা থাকলেও ৩৬ টি শয্যা রয়েছে। ২৯ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ৫ জন  চিকিৎসক। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে । ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের থাকার কথা থাকলেও আছে ৩ জন। এর মধ্যে গাইনী বিশেষজ্ঞ শেখ ফারহানা হুদা গত ৩০ নভেম্বর যোগদান করার পর থেকে তিনি হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। শিশু বিশেষজ্ঞ মিরাজ আলী সপ্তাহে রোববার ও মঙ্গলবার এই দুই দিন হাসপাতালে বসেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মাহবুবুল আলম ২৮ অক্টোম্বর যোগদানের পর থেকে  অনিয়মিত হাসপাতালে বসেন। চিকিৎসক জায়দা জালাল গত দুই বছর ধরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রেষনে রয়েছেন। কার্ডিওলজি, অর্থোপেড্রিক্স, চক্ষু, ইএনটি, সার্জারী, অ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন, ডেন্টাল, ইএমও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকসহ ৮টি পদ দীর্ঘ দিন ধরে  শূণ্য রয়েছে। যে কোন রোগী হাসপাতালে এলেই জরুরী বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় জামালপুর কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোগীদের স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় গরিব পরিবারগুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় অনেক রোগীকে পড়তে হয়  মৃত্যু ঝুকিতে। ২০০৬-২০০৭ইং অর্থ বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায়  মা ও নবজাতকের চিকিৎসা সেবা চালু করা হলেও বর্তমানে এ সেবা বন্ধ রয়েছে। ২০০৮ সালে  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি) চালু হলে তা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সেটা  বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ২২ লাখ টাকার  ডিজিটাল একটি এক্স-রে মেশিন  স্বাস্থ্য কমপ্লে্েক্র সরবরাহ করার কিছু দিন পরেই অকেজো হয়ে পড়ে।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেস্কের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক, তিনি অনিয়মিত হাসপাতালে আসেন। যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের সেবার মান আরও অবনতি ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মমতাজ উদ্দিন জানান, একা হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক সংকট ও  যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। জনবহুল এলাকা প্রতিদিন রোগীদের চাপ রয়েছে। রোগীদের সেবা  দিতে বিরতিহীন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে জনবল কম থাকায় নিয়মিত পরিস্কার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক বলেন, টাংগাইল জেলা সদর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়, তাই নিয়মিত আসা হয় না। তবে হাসপাতালের ব্যাবস্থ্যাপনা ও রোগীদের সেবার মান বাড়াতে চিকিৎসক সংকট মুক্ত করতে চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপারেশন থিয়েটার চিকিৎসক সংকটের কারনে বন্ধ রয়েছে। ফলে যন্ত্রপাতি ব্যাবহার না হওয়ায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফিরোজ আল মামুন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক চিকিৎসক বাড়িয়ে যাতে হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে লিখিত ভাবে অবগত করা হবে। এছাড়া প্রতিটি সমস্যার কারন খুজে বের করে সমাধান করা হবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page