• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

কানসাটে রাজার ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে চলছে মাদকসেবীদের আড্ডা ॥ দূর্ঘটনার আশংকা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি॥
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে অবস্থিত ঐতিহাসিক কুজা রাজার বাড়িটি বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির ভেতরে প্রতিদিন চলে মাদকসেবীদের আড্ডা।এছাড়া ভবনের পাশেই রয়েছে আমের বাজার সহ পথচারীদের চলাচলের রাস্তা। এতে করে ছাদ বা ঘরের ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে যে কোন মহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা এমন আশংকা করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এই রাজ বাড়ির ভবনটি সংস্কার ও সংরক্ষনের জন্য জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় সচেতন মহল। জানা গেছে, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার ২দিন কানসাট হাট বসে। এছাড়া প্রতিদিনের বাজারে যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে শত শত লোক। হাটের দিন শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৭/৮ টি ইউনিয়নের মানুষসহ বিভিন্নস্থানের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসেন। দুঃখজনক হলেও সত্য দীর্ঘদিন থেকে রাজ বাড়ি ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেও অভিযোগ করেন পথচারিরা। এছাড়া আন্তর্জাতিক খ্যাত কানসাট আম বাজারে আম কিনতে আসা সহ¯্রাধিক ব্যবসায়ী, কৃষক, চাষি, বিদেশি পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এই পরিত্যক্ত রাজ বাড়িটির পাশে আম কেনা বেচা করেন। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনের পাশেই চলছে দিনের পর দিন আম কেনা-বেচার কাজ। কানসাট আম বাজারসহ কানসাট হাট থেকে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশী রাজস্ব আয় হয়। আর এই হাটেই ঐতিহাসিক রাজার বাড়িটির বেহাল দশা দেখে বিভিন্ন পর্যটক ও স্থানীয়দের মনে জাগছে নানা প্রশ্ন। এদিকে, রাজ বাড়িটি সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, রাজ বাড়িটির পশ্চিম দিকে কানসাট বাজার প্রবেশের মুল ফটক। এই প্রবেশ পথ দিয়েই বিভিন্ন এলাকার সহ¯্রাধিক ব্যবসায়ী, কৃষক, চাষি, দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সাধারণ মানুষ আম বেচা-কেনা, গরুর হাটসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়া বাড়িটি পূর্বে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির সংলগ্ন কয়েকটি শ্রেণি কক্ষও রয়েছে। সেই শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকগণ নিয়মিত ক্লাস নেন। ভবনটি ভেঙে পড়লে শতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রাণহানী হতে পরে বলে আশঙ্কা করছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলামসহ শিক্ষকগণ। আর উত্তর দিকে রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট মিষ্টি ও চায়ের দোকান। এছাড়া ভবনটির দক্ষিণে খেলার মাঠ। প্রতিদিন এই মাঠে বিভিন্ন টূর্ণামেন্ট হয়ে থাকে। রাজ বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চারপাশ দিয়ে সকলে প্রাণ ভয় নিয়ে চলাচল করছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ এ ঝুঁকিপূর্ন ভবনে রাতের অন্ধকারে ,দুপুরে এবং সন্ধ্যার দিকে কিছু মাদকসেবী ভবনের ভেতরে নেশা করে। প্রতিদিনই চলে এখানে নেশার আড্ডা। যেখানে পথচারীরা ভয়ে ভবনের পাশ দিয়ে চলতে ভয় পায় সেখানে এসব নেশাগ্রস্থরা নেশার জন্য প্রাণ হাতে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে নেশার আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।যা দ্রুত বন্ধ হওয়া দরকার।এদিকে, কানসাট সাইফুল মেমোরিয়াল ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই রাজ বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এ ভবনটি সংস্কারে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে, ভবনটি পরিদর্শনে প্রয়াত উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এসেছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রাজ বাড়ির একেবারেই সংলগ্ন। কয়েকটি শ্রেণি কক্ষতে শিক্ষকরা কøাস নিচ্ছেন প্রাণের ভয়ে। যে কোন মহুর্তে ভেঙে পড়ে আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ঘটতে পারে। অন্যদিকে কানসাট হাট ইজারাদার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন দিন থেকে এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের প্রাণের কথা ভেবে ভবনটিতে সাবধানতা সাইন বোর্ড লেখে দিয়েছি। তিনি আরো জানান, আমরা হাট কমিটির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়ে তদন্ত করে গেলেও সংস্কার হয়নি এখন পর্যন্ত। এ ব্যাপারে, কানসাট ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ রাজ বাড়িটি  সংস্কারের জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেছি। আবেদনের প্রেক্ষিতে বেশ কিছুদিন আগে ভবনটি পরিদর্শন করে গেছেন। এছাড়া আমরা যতটুকু পারছি, পথাচারিদের সতর্কতার সাথে চলাফেরার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. বরমান হোসেন জানান, কানসাট রাজ বাড়িটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে এই ভবনে উপজেলা ভূমি অফিস ছিল। কিন্তু ভূমি অফিসটি শিবগঞ্জে চলে আসায় ওই ভবনে বর্তমানে কেউ প্রবেশ করে না। ভবনটি আমরা দেখা-শোনা করছি। আর এটি প্রাণহানি ঘটানোর মত তেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়নি বলে মনে করেন এই ভূমি কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, বাজারের পথচারিদের চলাচলের তেমন কোন ভয় নাই। তাঁরা নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারেন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page