• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৭ অপরাহ্ন

পোকামাকড়ের অনুকরণে অপারেশন সরঞ্জাম!

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮

প্রাণীদের অনেক গুণ মানুষ নকল করার চেষ্টা করে। এক জার্মান বিজ্ঞানী পোকাদের কিছু অসাধারণ ক্ষমতা চিকিত্সাবিদ্যার উন্নতির কাজে প্রয়োগ করার অভিনব প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। স্টুটগার্টের বিখ্যাত জীবতত্ত্ব মিউজিয়ামের অসাধারণ সংগ্রহ দেখলে প্রাণিজগতের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্ময় আরও বেড়ে যায়। ছোট বয়সেই অলিভার নামের ওই বিজ্ঞানী এই মিউজিয়ামে এসে মুগ্ধ হতেন।  তারপর প্রশিক্ষণের এক সুযোগ পেয়ে তিনি পর্দার আড়ালেও উঁকি মারার সুযোগ পেলেন।  বিশেষ করে পোকাদের সূক্ষ্ম শারীরিক গঠন সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ বেড়ে গেল। অলিভার বলেন, ‘অবাক করার বিষয় হলো, আকারে ছোট হওয়া সত্ত্বেও পোকাদের বিশাল শক্তি রয়েছে। তারা খাওয়াদাওয়া, বংশবৃদ্ধি, প্রতিরক্ষাসহ নানা রকম কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রায় নিখুঁত সব সরঞ্জাম গড়ে তুলেছে।’

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পোকারা কাটাকুটি, তরল পদার্থ ছিটানো, হুঁল ফোটানোর মতো কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। অলিভার বলেন, ‘একসময় আমার উপলব্ধি হলো পোকাদের এই সব ক্ষমতা চিকিত্সাবিদ্যার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যেতে পারে। বিশেষ করে এন্ডোস্কোপির ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।’

তখন তিনি জীবতত্ত্ব গবেষক থেকে বায়োনিক্স বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। জীববিদ্যার কৌশল প্রযুক্তিগত সমাধানসূত্রে রূপান্তরিত করাই তাঁর কাজ। জায়ান্ট ইচনিউমন প্রজাতির বোলতার ওভিস্ক্যাপ্ট বা দাঁড়া তাঁকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে। অতি সূক্ষ্ম হওয়া সত্ত্বেও সেটি কাজে লাগিয়ে এই পোকা ডিম রাখতে কাঠের মধ্যে এক সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত গর্ত করতে পারে।

স্টুটগার্টের ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটে এক গবেষক দলের সঙ্গে তিনি সেই দাঁড়ার বড় আকারের নকল তৈরি করেছেন। এভাবে তিনি রহস্যের সমাধান করতে পেরেছেন। অলিভার বলেন, ‘এই পোকার খোঁড়ার ক্ষমতার রহস্য হলো, সেটি মোটেই প্রচলিত পদ্ধতিতে ড্রিলিং করে না। অর্থাত্ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নয়। পেন্ডুলামের মতো উপর-নীচ সঞ্চালন করে ৩টি বল্লম চালিয়ে কুরে কুরে গর্ত খালি করে।’ এই প্রক্রিয়ার বড় সুবিধা হলো, এভাবে যে কোনো ক্রস সেকশনের গর্ত তৈরি করা সম্ভব। শুধু গোল নয়, চৌকো অথবা তিনকোণা গর্তও কোনো সমস্যা নয়।

সে কারণেই শরীরে কিছু নকল অঙ্গ বসানোর ক্ষেত্রে রাস্প ড্রিল আদর্শ যন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেমন হিপ জয়েন্ট বসানোর সময় তা ঘুরে গেলে চলবে না। নকল দাঁত বসানোর সময়ও সেটা জরুরি। অলিভার এমনই এক যন্ত্রের প্রাথমিক রূপ দেবার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘এর আয়তন কমিয়ে সুচের আকারে কমিয়ে আনাই আসল চ্যালেঞ্জ। তাই ধীরে ধীরে সেদিকে এগোতে হবে। অপারেশনের আরেকটি সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও তিনি প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আমেরিকায় তাঁর ‘বোন পাঞ্চিং’ যন্ত্রের ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া চলছে।

ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক অপারেশনের জন্য এই সরঞ্জাম অত্যন্ত উপযুক্ত। সে ক্ষেত্রে কার্টিলেজ স্লাইস করে কেটে ফেলতে হয়। কারণ তা রোগীর স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এখনো পর্যন্ত সামান্য পরিমাণ কার্টিলেজ কাটা সম্ভব। সার্জনকে তাই জায়গা খালি করতে বেশ কয়েকবার সরঞ্জাম ঢোকাতে ও বার করতে হয়। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কিন্তু নতুন সরঞ্জাম সেই ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিয়েছে, কারণ এখন সেটি দিয়ে কার্টিলেজ টেনে ধরা যাচ্ছে। ফলে অপারেশন অনেক দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এভাবে পোকামাকড়দের বিভিন্ন দক্ষতা থেকে আমাদের চিকিত্সাবিজ্ঞানে অনেক সরঞ্জাম উদ্ভাবন সম্ভব। -ডয়চে ভেলে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page