আসামের নাগরিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং কার্যক্রম ভারতের একান্ত নিজস্ব বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হওয়া প্রসঙ্গে চলা এক কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও জানান, ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোন কথা হয়নি বাংলাদেশের সঙ্গে সুতরাং এটি কোনভাবেই বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচাইতে ভালো সম্পর্ক চলছে। এর অন্যতম কারণ পরস্পরের প্রতি আস্থা। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেছে দিল্লি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯৭১ সালের চেতনায় বিশ্বাসী একটি দল ক্ষমতায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত বেশ ভালো করেই জানে তাদের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত রাজ্যগুলোতে স্থিতি অবস্থা তৈরিতে এই সরকার কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে। আর এ কারণেই দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাসের এক দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।
আসামে নতুন করে নাগরিক নিবন্ধনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ নাগরিকদের ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতে আমি বাংলাদেশের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করি। এনআরসি (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন) সম্পর্কে আমি স্থানীয় পত্রিকার সংবাদে পড়েছি। কিন্তু দিল্লি এখনো এ বিষয়ে কোন কথা বলেনি। সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের দৃঢ় সম্পর্কের কথা স্মরণে করে বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কে বর্তমানে উভয় দেশ লাভবান অবস্থায় রয়েছে। ভারত তার দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নে জন্য বাংলাদেশের উপর নির্ভর করছে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাতায়াতের করিডর গ্রহণ করছে। তেমনি বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে চাকা সচল রাখতে ভারতের বিদ্যুৎ শক্তির উপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া ভারতের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পড়বে জানিয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে সবচাইতে এগিয়ে প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডা। তাহলে বিশ্বের সবচাইতে দ্রুত গতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়া বাংলাদেশ কেনো ভারতের শীর্ষ বাণিজ্যিক সম্পর্কের দেশ হতে পারবে না?
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এ সময় জানান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করছে তার প্রশংসা করেছেন অমর্ত্য সেনের মত বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ভারত বিভক্তির সেই তিক্ত ইতিহাসকে পেছনে ফেলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণের মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই এবং একসঙ্গে উন্নয়নের পথে হাঁটতে চাই। এ সময় তিনি আরও বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ তাদের মধ্যকার যে কোন বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে সক্ষম।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর এই বক্তব্যের আগে পশ্চিমবঙ্গের ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী সাধন পান্ডে বলেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনা বিজয়ী হবেন। এ সময় তৃণমূলের এই মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা একজন মহান নেতা। আঞ্চলিক এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান তিনি এবং আমার নেতা মমতা ব্যানার্জি করতে পারেন না।
উল্লেখ্য, তিস্তা ইস্যুতে এখনো নিজের অবস্থান থেকে অনড় রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।