• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

টিআর প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

লালমনিরহাট প্রতিনিধি॥
গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগে কাগজ কলমে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে শতভাগ বিল উত্তোলন করার ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টেষ্ট ফর রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের কাজ না হওয়াতে সরকারী অর্থ বুঝে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার এলাকাবাসী।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কিসামত বড়াইবাড়ি বটতলা ব্রাম্ম আশ্রম সংস্কারের জন্য গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৭/১৮ অর্থ বছরে টিআর প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। আশ্রমটির সভাপতি রাম মোহন রায় প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে দুই কিস্তিতে সম্পুন্ন টাকা উত্তোলন করেন। সরকারী অর্থ উত্তোলন করে নিজের কাছে রাখায় স্থানীয়রা দ্রুত কাজ শুরুর দাবি করেন। স্থানীয়দের চাপের মুখে তিন মাস আগে মাত্র এক হাজার ইট কিনে মন্দির মাঠে রাখেন প্রকল্প চেয়ারম্যান রাম মোহন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছর শেষে হয়ে কাজের মেয়াদ উত্তীর্ন্ন হলে গত ৯ জুলাই ওই আশ্রমের ভক্ত ও এলাকাবাসী ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে ওই প্রকল্পের সভাপতি রাম মোহন রায় বলেন, স্থানীয় এমপি ও প্রতিমন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ভাল থাকায় তিনি এ অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছেন। কাজের জন্য ইট নেয়া হয়েছে। খুব তারাতারি বাকী কাজও সম্পন্ন করা হবে।
একই অবস্থা এ উপজেলার প্রায় সকল প্রকল্প। উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ সংস্কারের নামে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হলেও মসজিদে কোন কাজই করা হয়নি। ওই এলাকার কুটিরপাড় মাদরাসা থেকে পশ্চিমে স্প্যার বাঁধ পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য কাবিটা প্রকল্পের ২লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ হলেও মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় ঘাস কেটে মাটি সমান করা হয়েছে।
তবে এ প্রকল্প দুইটির সভাপতি ওই ইউপি সদস্য আফসার আলী বলেন, বেশ কয়কবার চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মফিজুল ইসলাম আমাদের কাজ দেখে গিয়েছেন। কিছুদিন আগের বৃষ্টির কারণে সামন্য ভেঙ্গে গেছে, তবে এতে কাজের মান নষ্ট হয়নি। যদি আমরা কাজ না করি তবে পিআইও বিল দিলেন কেন? তারা তাদের কাজ বুঝে নিয়েই তো বিল দিয়েছেন।
ঘাস কেটে মাটি সমান করে কাবিটার ৭৫ হাজার টাকার ভুয়া ভাউচার দেখানো হয় পলাশী ইউনিয়নের মদনপুরের জোবেদের বাড়ি হইতে বটতলা দিয়ে আশরাফের বাড়ির রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে। সারপুকুর রামমন্দির রেল লাইন হতে নারায়নের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৬০ হাজার টাকা, দুর্গাপুর দঃ গোবদা ধরনীর বাড়ি হইতে গোবদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের ৬০ হাজার টাকা, কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন হতে কাচারী ঘাট পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পের ৭৫ হাজার টাকা ও কমলাবাড়ির কালামের বাড়ি থেকে আফাজ ডাক্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা কাজ না করেই ভাগবন্টক করে নিয়েছেন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সভাপতিরা।
এসব প্রকল্পের সভাপতিগন সরকার দলীয়। এ জন্য কাজ না করেও প্রভাব খাটিয়ে বিল তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের ভাগ দিয়ে প্রায় সম্পুর্ন অর্থইআত্মসাৎ করেছেন।
এভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রম। কাগজ কলমে উন্নয়ন হলেও বাস্তবে রাস্তায় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প সভাপতি দাবি করেছেন, কাজ না করলে শতকরা ৩০/৩৫ টাকা এবং হাল্কা বা পুরো কাজ করলেও শতকরা ১০/১৫ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দিতে হয়। যা দিয়ে তিনি সব কিছু যায়েজ করবেন এবং অডিটে ব্যায় করবেন। টাকা না দিলে বরাদ্ধের দ্বিগুন কাজ করলেও বিলে স্বাক্ষর হয় না।
উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) মফিজুল ইসলাম জানান, উপজেলার হাজার হাজার এসব প্রকল্প তার পক্ষে একা দেখা সম্ভব নয়। তাই এমনটা ভুল হতেই পারে। তবে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে কারোরেই কাজ না করে আত্মসাৎ করার কোন সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারকে (পিআইও) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ