• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন

জাবালে নূর বাস চালকের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন জাবালে নূর পরিবহনের সেই বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম গোলাম নবীর আদালতে এই হত্যার দায় স্বীকার করে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

 

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব প্রাণ হারান।

 

জবানবন্দিতে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘জাবালে নূর বাসের (যার রেজি. নং ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭) চালক আমি। গত ২৯ জুলাই জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার পশে শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। বেশি ভাড়া পাওয়ার আশায় আগে যাত্রী উঠানোর জন্য সেখানে তিনটি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিলাম। আগে গিয়ে বেশি যাত্রী উঠানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তখন গড়ি ঢুকিয়ে দেই। পরে গাড়ি থেকে নেমে দেখি ১০-১২ জন আহত হয়েছে এবং দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আমার গাড়ির আঘাতেই দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় ৮-১০ জন। জনরোষের ভয়ে আমি পালিয়ে যাই।’

 

গত ১ আগস্ট মাসুম বিল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তাকে হাজির করেন। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করতে ও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখতে আবেদন করেন।

 

বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার দিনই অর্থাত্ ২৯ জুলাই নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলা নং ৩৩ (৭) ১৮।

 

পরে সংশ্লিষ্ট বাসের মালিক, চালক ও চালকের সহকারীদের গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। এ ছাড়া একই পরিবহনের অপর দুই বাসের চালক সোহাগ আলী ও জুবায়ের এবং হেলপার এনায়েত হোসেন ও রিপন রিমান্ডে আছেন।

 

এদিকে এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরই মধ্যে সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালালে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০-১২ জন আহত হন। শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় টাটা কোম্পানির তৈরি ২০১৬ মডেলের (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৯২৯৭) বাসটি। চাপা দেয়া বাসটির ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং হুইল, ব্রেক, সাসপেনসন ও চাকা ভালো রয়েছে। বাসের উইন্ডশিল্ড (সামনের কাচ), কিছু লাইট ও সামনের বাঁ পাশের অংশ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি বাসটিতে এমন কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ বা ত্রুটি পায়নি যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চালকের দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বাসটির ফিটনেস ঠিক থাকলেও কোনো রুট পারমিট ছিল না এবং চালক মাসুম বিল্লাহর হালকা যান চালানোর লাইসেন্স রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, মাসুম বিল্লাহ চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করার পর গত বছর হালকা যান চালানোর লাইসেন্স পান।

 

প্রসঙ্গত, দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার দিনই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এরপর ৯ দফা দাবিতে টানা নয়দিন রাজপথে আন্দোলনে ছিল দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী।

 

এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের মালিকের জামিন

 

এদিকে ৩ আগস্ট রাজধানীর মগবাজার এলাকায় মিনিবাসের চাপায় সাইফুল ইসলাম রানা নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের মালিক জুনায়েদ হোসেন লস্করকে জামিন দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম ফাহাদ বিন আমিন এ আদেশ দেন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page