• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় নেতারা খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাজধানীতে শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় নেতারা বলেছেন, দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনও নির্বাচন হবে না। তাকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দ্রুত তাকে মুক্তি দিতে হবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের কাছে ৮ টি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, খালেদা জিয়ার সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, ইভিএম বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমতল মাঠ প্রস্তুত করতে হবে। এই দাবিগুলো মানা না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ নির্বাচন হতে দেবে না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনাদের কাছে ফরিয়াদ করতে চাই। আমাদের মাতা, গণতন্ত্রের মাতাকে আর কারাগারে দেখতে চাই না। তাকে কারাগারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তাকে মুক্ত করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। বুকে হাত দিয়ে বলুন, বাংলাদেশকে মুক্ত করবোই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করবোই। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আবারও বুকের রক্ত দিতে হবে।
শনিবার অপরাহ্নে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের ভিআইপি সড়কে দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই বিরাট জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল।
প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে আরো বক্তব্য দেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, বেগম সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম  জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, কাজী আবুল বাশার, সাইফুল আলম নীরব, শফিউল বারী বাবু, রাজিব আহসান প্রমুখ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলটির নেতাকর্মীরা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনমুখী স্রোত তৈরি হয়। দুপুর দুই টায় নয়াপল্টন অস্থায়ী মঞ্চে কোরান তেলঅওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক জনসভা শুরু হয়। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত ছিল জনসভার বিস্তৃতি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বুকে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশবাসী, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন। কারণ খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন, এই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য। তাই সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে এই দানবকে পরাজিত করতে হবে। ইতিমধ্যে যারা ঐক্য গড়েছেন, তাদের স্বাগত। সারাদেশের সবাইকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
দেশে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি তাঁরা আগেই রায় লিখে রেখেছেন? মনে রাখবেন কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জনগণ মেনে নেবে না। এ সময় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ দেউলিয়া রাজনৈতিক দল হয়ে গেছে। তারা আগে বড়াই করে বলতো- যুবসমাজ তাদের সঙ্গে আছে। আর আজ শিশু-কিশোররাও দিন গোনে কখন সরকারের পতন হয়। সরকারের কোন নেতাই রাতে ঘুমোতে পারেন না। এই বুঝি খালেদা জিয়া আসলো, তারেক রহমান আসলো। ২৪টা ঘণ্টা তারা বিএনপি ভীতির কারণে ঘুমোতে পারেন না। এই ভীতি থেকে বাঁচতে ইভিএম নিয়ে আসছে।
ফখরুল আরও বলেন, এই সমাবেশের আগের রাতে সারাদেশে বিএনপির প্রতিটা নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ রেট দিয়েছে। সারাদেশে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে বাধা দিয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সব দলের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে,না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। ইভিএম বলুন আর যতই ষড়যন্ত্র করুন ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হতে দেবে না বিএনপি। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিবে। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। সারা দুনিয়া চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ নির্বাচন এভাবে হবে না। এজন্য নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নামতে হবে। তফশিল ঘোষনার আগে বা পরে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরকে নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট করেছে তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। মোশাররফ হোসেন বলেন,এরশাদের সময় হুঁদা-মতিন যড়যন্ত্র করেছে, এখন এই সরকার করছে। সরকার যতোই ষড়যন্ত্র করুক কোন লাভ নেই।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। তাই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মোশাররফ বলেন, আপনারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অতীতের কথা ভুলে নিরপেক্ষ হয়ে যান। জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন। কোনো একটি দলের হয়ে কাজ করবেন না।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। চলমান সংসদ বহাল রেখে দেশে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এছাড়া পৃথিবীতে সংসদ বহাল রেখে কোনো দেশে নির্বাচন হয় এমন নজির নেই। কেননা তখন নির্বাচনে সমান সুযোগ থাকে না সব প্রার্থীদের জন্য।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বুঝে ফেলেছে আওয়ামী লীগ কী ধরনের রাজনৈতিক দল। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সরকার দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। এর মাসুল আওয়ামী লীগ সরকারকে দিতে হবে। তরুণ প্রজন্ম আর কোনোদিন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।
বুলগেরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার বিষয় তুলে ধরে মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মওদুদ আহমদ বলেন,আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য যতবার চেষ্টা করেছি, ততবার সরকার আটকে দিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় নেত্রীর মুক্তি সম্ভব নয়, তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ, তাই রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের অপরাধ তিনি জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে, তার অপরাধ তিনি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে।তাই তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। সরকার নানাভাবে দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এবার ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। তাই চার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নতুন ইভিএম আনতে চায়, কিনতে পারলে তাদের লাভ হবে। সাবধান হয়ে যান, আপনাদের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনও নির্বাচন হবে না। তাকে জেলে রেখে কোনও নির্বাচন গ্রহণযোগ্যও হবে না। দেশে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, আমরা যদি অংশ নিতে পারি, তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, আবার সু’দিন আসবে, দেশ ভালোভাবে চলবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে যদি বেশি দিন আটক রাখেন তাহলে জেলখানায় তার সঙ্গে আপনার দেখা হতে পারে। গয়েশ্বর বলেন, আজকে গণতন্ত্র গুম, গঠনতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া কারাগারে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেই নির্বাচনে যাব কে বলেছে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার, হুদা কমিশনের পরিবর্তন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোনও নির্বাচন হবে না। আগামী দিনে তাকে মুক্ত করেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তিনি বলেন,সরকার আবারও চায় একটি নীল নকশার নির্বাচন করতে। সে জন্য মিথ্যা মামলা, গুম-খুনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসবে যখন বিএনপিকে দমাতে পারেনি, তখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। সেটি হলো, ইভিএম। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন হবে, তবে সেই নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে। ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন,কিসের নির্বাচন? দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা ছাড়া নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। আপনাদের পতন অবশ্যম্ভাবী। কিন্ত আপনি টের পাচ্ছেন না।
শাসুজ্জামান দুদু বলেন, সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে নাই হয়ে গেছে। এসব টাকা ফেরত দিতে হবে। বেগম জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবো না।
অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন বলেন, আর মাত্র দু’টি মামলায় জামিন হলেই আমাদের নেত্রী জেল থেকে মুক্তি পাবেন। দলের আইনজীবীরা গ্রেফতারকৃত নেতাদের আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মুক্ত করবে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page