• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন

সরকার আইনকানুনের কোনো ধার ধারছে না: বিএনপি

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার প্রধানের অদম্য প্রতিহিংসার দ্রুত চরিতার্থ করার জন্য আদালত কারাগারের ভেতরে স্থানান্তরের অসাংবিধানিক ন্যাক্কারজনক কাজটি করা হয়েছে। সরকার আইনকানুনের কোনো ধার ধারছে না। আদালতকে বন্দি করা হয়েছে কারাগারে। যেমন দেশের বিপুল জনসমর্থিত নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা।
রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকলেও জোর করে হলেও আদালতে নিয়ে আসতে হবে—এই ধরনের এক আক্রোশের মনোবৃত্তি ফুটে ওঠে আইনি কার্যক্রমে। অন্ধকার কারাগারে আদালত গঠন খালেদা জিয়াকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। যে মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছিল, সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন। অর্থাৎ বেগম জিয়াকে এখন বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য দুটি। একের পর এক মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সাজার স্তুপ বৃদ্ধি করা, আরেকটি উদ্দেশ্য দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক অসুস্থতার আরো অবনতি ঘটিয়ে বেগম জিয়াকে বিপর্যস্ত করা। বুধবারও আপনারা দেখেছেন হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। হাত-পা নড়াতে তার অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি এতোটাই অসুস্থ ছিলেন যে, তিনি রীতিমতো কাঁপছিলেন এবং চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারছিলেন না। বার বার দাবি করা সত্যেও তার সু-চিকিৎসায় সরকার অবহেলা করেছে।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শনুযায়ী তার যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়নি। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার সু-চিকিৎসার দাবি বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের কর্মীরা গতকাল স্বচক্ষে দেখলেন এবং তাদের মাধ্যমে জাতি আবারো জানলো বেগম খালেদা জিয়া কতটা গুরুতর অসুস্থ। তাকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে রেখে নির্যাতন করছেন সরকার প্রধান। পরিত্যক্ত কারাগারে তাকে যে কক্ষটি দেয়া হয়েছে তা বাস করার জন্য অনুপযুক্ত। মেরামতহীন অপরিচ্ছন্ন জরাজীর্ণ কক্ষটি দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছায়। বেগম জিয়া যাতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজ কক্ষে নির্বিঘ্নে বাস করতে না পারেন, তিনি যেন সারাক্ষণ কষ্ট পান সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
রিজভী বলেন, সামগ্রিকভাবে আইন ও বিচারিক কার্যক্রমেই দেখা যায় বেগম জিয়ার ওপর জুলুমের প্রকাশ। দেশনেত্রী অসুস্থ থাকলেও জোর করে হলেও আদালতে নিয়ে আসতে হবে- এ ধরনের এক আক্রোশের মনোবৃত্তি ফুটে ওঠে আইনী কার্যক্রমে। গতকালও বেগম জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অন্ধকার কারাগারে আদালত গঠন দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। বেগম জিয়ার ওপর সরকারের এই বেআইনী অসদাচরনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার ওপর যে অবিচার চলছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি সরকারের বেআইনি হিংস্র আচরণ। এর জবাব ক্ষমতাসীনদের জনগণের কাছে দিতেই হবে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের সিনিয়র নাগরিক তার প্রতি সরকারের এমন নিষ্ঠুর আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না। কারণ এ ধরনের নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার লজ্জাজনক পরাজয় হবে। তাই একতরফা ভোটারশূন্য নির্বাচন করার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে বিরোধীদলশূন্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া, পরিবার ছাড়া পলাতক জীবন বেছে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারীরা বিএনপি নেতাদের বাসা ও বাড়িতে হানা দিচ্ছে, তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করা হচ্ছে দুর্ব্যবহার, গ্রেফতার করছে এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো মামলা দিয়ে সারাদেশকে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের বাহিনীগুলো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জান্তব হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ১৫ শতাধিক এবং মামলা হয়েছে ১২ শতাধিক। নাম উল্লেখ করে আসামি সংখ্যা ১১ হাজার এবং অজ্ঞাতনামা আসামি সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। দমন-পীড়নের এতো তীব্র মাত্রার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তির ক্ষয় হয়নি। জনগণের নীরব ক্ষোভ প্রতিদিন বেড়েই চলছে। সরকার বিরোধী দলের ওপর যত জুলুম করছে ততই সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। অশান্তির আগুনে ভিতরে-ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণার মাশুল সরকারকে দিতেই হবে।
তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের নীরব ক্ষোভ প্রতিদিনই বাড়ছে। অশান্তির আগুনে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে।কাজেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণার মাসুল সরকারকে দিতেই হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কৃষকদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন মো. জসিম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page