• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

“প্রস্তুতি নিন, এক মাসের মধ্যে নৌকা ভাসিয়ে দেওয়ার আন্দোলন”

আপডেটঃ : বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আজ বুধবার রাজধানীতে বিএনপির প্রতীকী অনশনে দলের নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহনের আহবান জানিয়ে বলেছেন, আর বেশি সময় নেই। আগামী এক মাসের মধ্যে দেশে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই আন্দোলনে নৌকা পানিতে ভেসে যাবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া একতরফা কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না, হতে দেওয়া হবে না। তার মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে রাজপথ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে হবে না। তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও তার মুক্তির দাবিতে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে আয়োজিত এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং ২০-দলীয় জোটের নেতারা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। সকাল নয়টার মধ্যেই কর্মসূচিস্থলে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের ভিড়ে কানায় কানায় ভরে যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকা। বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে থেকে অনশনস্থল ত্যাগ করা শুরু করেন। এ কারণে অনশনের সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন,তখন উপস্থিতি কমে যায়।
কর্মসুচির শেষ পর্যায়ে সাদা পোশাকের পুলিশ মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইল এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। ঢাকা ছাড়া সারাদেশেও একই কর্মসূচি পালন করছে দলটি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকায় তিনি এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। প্রতীকী অনশন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।
এদিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশন পালন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার সঙ্গে অনশন করেন দলের সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেনসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্যায় ও মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার মুক্তি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। তিনি কারাগারে অসুস্থ, তাকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি যেহেতু কারাগারে আছেন, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু চিকিৎসক দল বারবার পরামর্শ দেয়ার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। সারা দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দেশি-বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর খালেদা জিয়াকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের সময় শেষ। মামলা, গ্রেপ্তার করে বিএনপির দাবি আদায়ের আন্দোলন দমন করা যাবে না। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী না। যারা এখনো আওয়ামী লীগের কথায় কাজ করছেন, তাদের কিন্তু ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই অযথা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেপ্তার ও মামলা দেবেন না।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, সরকার আতঙ্কিত হয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। কয়েক দিন আগে প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের মানববন্ধন শেষে বিনা কারণে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। এসব করছে সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে।
মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের সময় শেষ আসছে। আপনারা অপেক্ষা করুন, এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে যে আন্দোলনে সরকারের নৌকা ভেসে যাবে। আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজপথের আন্দোলনেই সম্ভব। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা সফল না হওয়া পর্যন্ত কেউ ফিরে যাবো না। শুধু হাততালি দিয়েন না, কর্মসূচি দিলে মাঠে কতজন থাকবেন, দেখবো।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্জন কারাগারে আছেন। তাকে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার চায় না খালেদা জিয়ার মুক্তি পাক। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে বলে অন্তত আমার মনে হয় না। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ হলো রাজপথের আন্দোলন। ইনশাআল্লাহ, আমরা খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমেই কারামুক্ত করবো।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলখানায় তিলে তিলে মেরে ফেরার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা আদালতের রায় মানি না। তাকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করেই তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, হবেও না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় ভোট ছাড়া। নির্বাচনে ভোট দেয় দলীয় প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও দলীয় এজেন্টরা।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যদি আড়ালে আবডালে নির্বাচনে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। ড.আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে বিরোধী দল ধ্বংস করছে। ভেবেছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের নেত্রীকে মুক্ত করেই আগামী নির্বাচনে যাবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গণতান্ত্রিক লড়াই চলবে। সেই লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করবো।
অনশনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা. এ জেড জাহিদ হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহাজাহান, আবদুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাগপার লুৎফর রহমান প্রমুখ।
বিএনপির সঙ্গেই আছি, থাকব: জামায়াত
অনশনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার বলেন, অতীতের মতো আগামী দিনের সকল আন্দোলনেও জামায়াত ২০ দলীয় জোটের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করা হচ্ছে। আদালত তাকে জামিন দিলেও সরকার তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আমরা জামায়াত ইসলামী বিএনপির এই অনশনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সরকারকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই বেগম জিয়া নিয়ে যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন তাকে ছাড়া দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ হতে দেবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ