• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন

চলছে লেগুনা, আছে প্রাইভেট সিএনজিও

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মিটার নেই, রুট পারমিটও নেই, এমনকি বাণিজ্যিকভাবে চলার অনুমতিও নেই- এরকম শত শত অবৈধ সিএনজি (প্রাইভেট) অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকার রাজপথ। বৈধ সিএনজিগুলো নানা অপরাধে শাস্তির মুখোমুখি হলেও অবৈধ এসব সিএনজি বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চলছে বহাল-তবিয়তে। এ নিয়ে বৈধ চালকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও বিআরটিএ বলছে, আইনি জটিলতায় প্রাইভেট সিএনজিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা। তবে অবৈধ যে কোনো অটোরিকশা পেলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা  নেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তির ভিত্তিতেই এই সিএনজিগুলো রাজপথে চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে লেগুনা বন্ধে পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দিলেও রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লেগুনা। প্রথম দু’একদিন কয়েকটি রুটে লেগুনা বন্ধ থাকলেও এখন আবার পুরোদমে রাজধানীর সব রুটেই চলছে। লেগুনা বন্ধ নিয়ে পুলিশের এখন দুই ধরনের ভাষ্য। কিছু কর্মকর্তা চাচ্ছেন লেগুনা উঠিয়ে দিতে। আবার অন্য কিছু কর্মকর্তা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে এখনই লেগুনা উঠিয়ে দিলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন। একদিন লেগুনা বন্ধ থাকায় বহু মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই পুলিশ একটু শিথিল হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহউদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না।            এটা আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমরা লেগুনার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের বলেছি, প্রধান সড়কে চলতে পারবে না। তবে ফিডার (সংযোগ) রোডগুলোতে তাদের চলতে দেওয়া হবে। এজন্য তাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। তারা কোন রোডে চালাতে চায় সেটা আমাদের জানাতে বলেছি, এর মধ্যে কোনো প্রধান সড়ক পড়লে সেগুলো বাদ দিয়ে তাদের অনুমতি দেওয়া হবে।’
কিছুদিন আগেও রাজধানীতে অবাধে চলাচল করেছে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের সিএনজি অটোরিকশা। বর্তমানে ঢাকার বাইরের সিএনজি এখন আর ঢুকতে দেওয়া হয় না। তবে এই সিএনজিগুলো পুলিশের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে রাজধানীর আশেপাশে চলাচল করছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলার দিকে এখনও ঢাকা জেলা বা নারায়ণগঞ্জের সিএনজি চলাচল করছে। একাধিক চালক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তারা সার্জেন্টের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই চালাচ্ছেন সিএনজি। আবার কেউ কেউ এমন প্রভাবশালীদের ছায়ায় আছেন যে, প্রতিদিন সকালে অফিসে নামিয়ে দিয়ে আসার বিনিময়ে পুলিশে ধরলে তার নাম বলেন। এতে কাজও হয়, ছেড়ে দেয় পুলিশ। অনেক চালকের কাছে সার্জেন্টদের ভিজিটিং কার্ডে স্বাক্ষর দেওয়া আছে। ওই কার্ড দেখালে অন্য সার্জেন্টরা আর ঝামেলা করেন না, চালকদের ছেড়ে দিচ্ছেন।
বর্তমানে ঢাকায় চলাচল করছে প্রায় ১৫ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এর মধ্যে প্রাইভেট অটোরিকশা রয়েছে প্রায় দুই হাজার। এই প্রাইভেট অটোরিকশাগুলো সার্জেন্টদের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া ভাড়ায় চলতে পারে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্জেন্টদের নিজেদেরও এমন অনেক প্রাইভেট অটোরিকশা রয়েছে।
যুগ্ম কমিশনার মোসলেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই প্রাইভেট সিএনজিগুলো আমাদের জন্য আসলেই খুব ঝামেলার। ভেতরে মালিক না-কি যাত্রী বসে আছে, সেটা নিশ্চিত করা কঠিন। আমরা চেষ্টা করি, চেকপোস্টগুলোতে যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার উনি আসলে মালিক না-কি যাত্রী। সবসময় এটা ধরাও যায় না। কারণ চালক যাত্রী তোলার সময় মালিকের নাম বলে তার আত্মীয় পরিচয় দিতে সবকিছু শিখিয়ে দেন। ফলে ওই যাত্রী ঝামেলা এড়াতে চালকের শেখানো কথাগুলোই বলতে থাকেন। ফলে পুলিশ সবসময় সঠিকভাবে তাদের আটকাতে পারে না। বিষয়টি আমরা বিআরটিএকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অনুমোদিত রুট পারমিটেই রাস্তায় লেগুনা চলছে। শুধু একটি ঘোষণার মাধ্যমে কোনো অনুমোদিত বিষয় বন্ধ করে দেওয়া যায় না। আর বিআরটিএ বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে অবগত নয়।
সর্বশেষ ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণার একদিন পর আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটির (আরটিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই কমিটির সভাপতি ডিএমপি কমিশনার। তিনি প্রথমদিকে ওই বৈঠকে ছিলেন। পরে চলে গেলেও তার প্রতিনিধি হিসেবে একজন যুগ্ম-কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান সড়কে লেগুনা বন্ধ করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ অটোরিকশা অটোটেম্পো পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, ‘বিআরটিএর রুট পারমিট অনুযায়ী আমরা পরিবহণ পরিচালনা করছি। আমাদের রুট পারমিট আইনসিদ্ধ। হঠাত্ ঘোষণা দিয়ে বৈধ একটা বিষয়কে অবৈধ করা যায় না। এজন্য আলাপ-আলোচনা করতে হবে।’
ঢাকা জেলা হালকা যানবাহন সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এই পরিবহণগুলো ফিডার রোডেই চলাচল করছে, যেসব রোডে কোনো বাস সার্ভিস নেই। তাছাড়া এসব সড়কে খুবই নিম্নআয়ের মানুষ চলাচল করে। হঠাত্ করে বন্ধ করে দিলে জটিলতা দেখা দেবে। কারণ যেসব পরিবহণের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো তো কোনো পদ্ধতি অবলম্বন না করে বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। মালিকদের সময় দিতে হবে। এমন কোনো পরিস্থিতি হলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য মালিকরা আদালতের শরণাপন্নও হতে পারেন।’
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page