• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদের স্বাক্ষরে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল।এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও  তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে।
এর আগে বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (ক্যাডার, নন-ক্যাডার পদে) প্রচলিত কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপাতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সংশ্লিষ্ট সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সরকার গঠিত সচিব কমিটি। গতকাল বুধবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সচিব কমিটির সেই সুপারিশই বহাল রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামো অনুযায়ী মোট ২০টি গ্রেড রয়েছে। এর প্রথম গ্রেডে অবস্থান করেন সচিবরা। আর প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের শুরুটা হয় নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের মধ্যে। একজন গেজেটেড বা নন গেজেটেড প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নবম গ্রেডে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, ও শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা অর্থাৎ মোট ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিধান রেখেছে সরকার। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে এই ৫৬ শতাংশ কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে সচিব কমিটি। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোনও কোটা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ দেয়নি ওই কমিটি।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা উনি রাখবেন। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সচিব কমিটি ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এখন আর পিছিয়ে পড়া কোনও জনগোষ্ঠী নেই। সবাই এগিয়ে গেছে। তাই তাদের জন্য কোনও কোটা রাখার সুপারিশ করা হয়নি।
গত ১১ এপ্রিল সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে সরকার।
১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ সর্বশেষ কোটার হার নির্ধারণ করা হয়। যা এতদিন অনুসরন করা হতো। এই সময়ে মুক্তিযোদ্ধার জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ কোটায় মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র- কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাগুলোর মধ্যে যেকোনো কোটায় পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই কোটা থেকে ১% যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থী দিয়ে পূরণ করা হবে মর্মে বিধান করা হয়।
বাংলাদেশে সংবিধান প্রবর্তনের আগেই ১৯৭২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এক অফিস স্মারক জারি করা হয়। ওই স্মারকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি এবং দেশের পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সমতাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কোটা পদ্ধতির সূচনা করা হয়।
১৯৯৭ সালের জানুয়ারি মাসে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, রেগুলেটরি রিফরমস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান এবং সাবেক সচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনের সুপারিশ পর্যালোচনার করে সচিব কমিটি সুপারিশ প্রণয়ন করে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page