• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫২ অপরাহ্ন

বড়লেখায় ভূমিহীন পরিবারের বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত ভূমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় ভূমিখেকো চক্র

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥
বড়লেখায় একটি ভূমিহীন পরিবারের বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত ভূমি জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় ভূমিখেকো চক্র। এজন্যে জাল জালিয়াতি, হামলা মামলা ইত্যাদি নানাভাবে ওই ভূমিহীন পরিবারটিকে হয়রানী চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
জানা গেছেÑ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নস্থিত রাজপুর গ্রামের ভূমিহীন আয়ুব আলী ও তার স্ত্রী জমিলা খাতুনের ভোগদখলাধীন পূর্ব দৌলতপুর মৌজাধীন ৪৪নং জেএলভূক্ত ৫৯১নং দাগের ০১ একর খাস ভূমি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ২০০৫ সালে বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত হন। এরপর নামজারী রেকর্ডের মাধ্যমে তারা ৩৯৩নং নামজারী খতিয়ানপ্রাপ্ত হন। ইতিপূর্বে উক্ত তফসিলভূক্ত সর্বমোট ০১.৬৪ একর খাস ভূমি পার্শ্ববতী গ্রামের জমির আলী ও মন্তাজ আলী সমান অংশে বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু, তারা প্রকৃত ভূমিহীন না থাকায় ও উক্ত ভূমির মধ্যে ০১ একর ভূমি প্রকৃত ভূমিহীন আয়ুব আলীর ভোগদখলে থাকা সত্তেও বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং বন্দোবস্তোপ্রাপ্ত হবার আগে ও পরে অবৈধভাবে উক্ত ভূমির দখল বিক্রি করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তাদের বন্দোবস্তো বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভূমির মধ্যে ০১ একর ভূমি প্রকৃত ভূমিহীন আয়ুব আলী ও তার স্ত্রী জমিলা খাতুনের নামে বন্দোবস্তো দেয়া হয়। পরবর্তীতে আব্দুল খালিক নামীয় এক ব্যক্তি প্রতারণামূলকভাবে ভূমিহীন সেজে উক্ত ভূমি তার নামে বন্দোবস্তোপ্রাপ্তির আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে উক্ত ভূমির ব্যাপারে ভূগা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী অফিসারের তদন্তে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়লে আব্দুল খালিকের আবেদনটি বাতিল করা হয়।
এরই মধ্যে আয়ুব আলীর মৃত্যুর পর উক্ত ভূমির নামজারী রেকর্ডের মাধ্যমে তার পুত্র আব্দুর রহমান, কন্যা রায়না বেগম, রিনা বেগম, রুকিয়া বেগম, আমিনা বেগম, সারমিন বেগম ও স্ত্রী জমিলা খাতুন ৫৩৪নং নামজারী খতিয়ানপ্রাপ্ত হন। অপরদিকে, প্রতারণামূলক বন্দোবস্তো আবেদন বাতিল হবার পর থেকে উক্ত ভূমি জবরদখল করার জন্য আব্দুল খালিক একের পর এক বিভিন্ন ধরনের হয়রানীমূলক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করে আয়ুব আলীর পরিবারকে হয়রানী শুরু করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে স্থানীয় গ্রাম আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করলে গ্রাম আদালতের বিচারক সালিশের মাধ্যমে উক্ত ভূমির সীম-সীমানা নির্ধারনের মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। এরপর থেকে আব্দুল খালিক বন্দোবস্তো বাতিলকৃত জমির আলীর উত্তরাধীকারী আব্দুল হান্নানকে দিয়ে ভূমির দখল নেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হন। এরই ধারাবাহিকতায় আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতের আধাঁরে আয়ুব আলীর বসতঘরের বারান্দার গেইটে তালা দিয়ে আয়ুব আলীর স্ত্রী ও কন্যাদেরকে জিম্মি কওে রাখে। এমতাবস্থায় আয়ুব আলীর স্ত্রী জমিলা খাতুন মোবাইলে ফোনে ঘটনাটি কর্মস্থলে অবস্থানরত পুত্র আব্দুর রহমানকে জানালে তিনি তার চাচাতো ভাই আব্দুল মন্নানকে ঘটনাটি দেখতে অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে আব্দুল মন্নান ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীরা আয়ুব আলীর বাড়ির রাস্তার উপর ঘর তৈরীর চেষ্টা করছে। এসময় তিনি বসতঘরের পিছনের দরজা খোলে জমিলা খাতুন ও তার কন্যাদেরকে মুক্ত করেন। এরপর সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পরে আব্দুল মন্নান, জমিলা খাতুন, জমিলা খাতুনের কন্যাগণ ও দুজন জামাতাকে আসামী করে বড়লেখা থানায় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা (নং ১৭১/১৮) দায়ের করে। পুলিশ ওই মামলায় আব্দুল মন্নানকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে জমিলা খাতুনের পুত্র আব্দুর রহমান বাড়িতে এসে  গত ১৬ সেপ্টেম্বর আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী হাজেরা বেগম গংদের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় একটি মামলা নং (১৭৩/১৮) দায়ের করেন। এ খবর পেয়ে হাজেরা বেগম মৌলভীবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আয়ুব আলীর ভাগ্না জুয়েল আহমদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা (নং ৩৩৬/১৮) দায়ের করেছে। ভূমিখেকো চক্রটির একের পর এক এহেন তৎপড়তার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হয়েছে আয়ুব আলীর পরিবার। এহেন পরিস্থিতিতে নিরূপায় হয়ে আয়ুব আলীর পুত্র আব্দুর রহমান গত ১০ অক্টোবর দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page