• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালকের প্রার্থীতা প্রত্যাহারে টেলিফোন নির্দেশ নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরার আহ্বান রাষ্ট্রপতির দেশে হিট অ্যালার্ট জারি, শঙ্কায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর দাবি ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্ব প্রতিক্রিয়া নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার সিদ্ধান্ত আইসিসি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা ইসফাহানে ‘বিস্ফোরণের’ শব্দের কারণ জানালো ইরান এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা কারাগার: রিজভী রাজধানীর শিশু হাসপাতালে আগুন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তা ১০ ভাগেরও কম

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের মনেপ্রাণে একজন ব্যবসায়ী বলে ভাবতে পারেন না। ফলে তারা ব্যবসা শুরু করলেও নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে দৃশ্যত নারীর নামে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ তাদের স্বামী বা পুরুষ প্রধানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা পরিবারের নারীদের নাম ব্যবহার করছে। এশিয়া অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে। ‘ইমার্জিং লেসন অন ওমেন’স এন্টারপ্রেনারশিপ ইন এশিয়া এন্ড দ্য প্যাসিফিক’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এশীয় উন্নয় ব্যাংক (এডিবি) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) রয়েছে যার ১০ ভাগেরও কম উদ্যোক্তা নারী। গবেষণা সময়ে ৩শ জন নারী উদ্যোক্তার সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছে যাদের মাধ্যে মাত্র একজনকে পাওয়া গেছে যিনি নিজেই শুরু থেকে ব্যবসা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা রয়েছে। এর জন্য কমপক্ষে তিন বছর তার ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা শুরু করার মূলধন জোগাড় করাটাই বড় সমস্যা। তা ছাড়া অবিবাহিত নারীর জন্য এ মূলধন জোগাড় করা আরো বেশি সমস্য। এ জন্য তরুণ নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ভালো বিজনেস প্রপোজাল বা ব্যবসা পরিকল্পনা কিভাবে তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যবসার প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহে এ ধরনের আইডিয়া শেয়ার বা প্রপোজালগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে বিজনেস প্রপোজালের বিপরীতে বিনিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
নিম্ন উত্পাদনশীলতাও নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠায় এক ধরনের বাধা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান থেকে পুরুষ পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৮ গুণ বেশি ফল পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ায় এ হার ৬ গুণ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নারীরা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে খুব কম সময় পায়। তা ছাড়া পরিবারে সময় দেওয়ার জন্য বাজার সম্প্রসারণ এবং নেওয়ার্কিং এর মতো কার্যক্রমে খুব কম সময় ব্যয় করতে পারে। ব্যবসা শুরুর জন্য পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহযোগিতার অভাবও রয়েছে।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন ভাবে ব্যবসার অর্থ সংগ্রহে সমস্যায় পরছে। এর বড় কারণ হলো সম্পত্তি বন্দক রাখার জন্য নারীর নামে পর্যাপ্ত দলিলের অভাব। ব্যাংকারদের নারীর প্রতি ভিন্ন মনোভাবও দায়ী। ব্যাংকগুলো একজন পুরুষ জামিনদার দাবি করেন। এসএমইর উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র পর্যায়ে এবং গ্রামীণ কেন্দ্রীক। এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০০৬-২০০৯ সাল পর্যন্ত এসএমই খাতে গড়ে ৫৫ ভাগ হারে ব্যাংকগুলো ঋণ বাড়িয়েছে যার মাত্র সাড়ে ৩ ভাগ গিয়েছে নারী উদ্যোক্তার হাতে।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোতে তাদের জন্য পৃথক হেল্প ডেক্সসহ জামানতবিহীন ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপক্ষে ১৫ ভাগ ঋণ নারীদের দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বাধার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতাও একটি। নারীর প্রতি সহিংসতায় অর্থনীতির ক্ষতির উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে এ ধরনের সহিংসতায় যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তার আকার মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) দুই শতাংশের সমান। ২০১১ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে এ ক্ষতির আকার জিডিপি ২ দশমিক ১ ভাগের সমান ছিল যা বিশ্ব গড়ের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে এশিয়ার অন্য দেশের অবস্থাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার এক-তৃতীয়াংশ নারী-পুরুষ মনে করে নারীদের গৃহের বাইরে চাকরিতে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। আফগানিস্তানে নারীরা পরিবারের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারে না ও ভ্রমণ করতে পারে না। পাকিস্তানে পরিবারের পুরুষ সদস্য ছাড়া নারীরা নিজ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন না। বাংলাদেশে কোনো নারীর স্বামী যদি সহায়ক না হয়, সেক্ষেত্রে তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা অনেক কঠিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে নারী উদ্যোক্তারা অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে এগিয়ে আসছে। ২০২৫ সাল নাগাদ নারী উদ্যোক্তাদে মাধ্যমে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের জিডিপিতে সাড়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বে এসএমইর অর্ধেক রয়েছে নারীদের দখলে। পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিকের ৫৯ ভাগ রয়েছে নারীদের মালিকানা। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার ১০ ভাগেরও কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোটিভেশন বা উত্সাহ নারীদের উদ্যোক্তা হতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এ উত্সাহ সব ক্ষেত্রে একরকম হয় না। কারণ উন্নত বিশ্বে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নারীর কর্মসংস্থানের হারই অনেক কম, সেখানে তাদের উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে উঠা আরো কঠিন। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে ৮০ ভাগ নারী উদ্যোক্তা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যের উত্সাহ পেয়েছেন। চীনে এ হার দুই-তৃতীয়াংশ। এ নারীরা ঋণ প্রাপ্তিতে অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উত্সাহে এগিয়ে গেছেন।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page