• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

দেশ অস্থিতিশীল করতে অনির্বাচিত সরকার চায় তারা : প্রধানমন্ত্রী

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, নির্বাচনে জয় আমাদের হবেই। কারণ জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে। সদ্যগঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নিরপেক্ষ ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ দাবির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে অনির্বাচিত সরকার আসার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধান লংঘন করে অনির্বাচিত সরকারের দাবি তুলে তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তারা নির্বাচন চায় কি-না, সেটাতেই সন্দেহ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, একদিকে নিজেকে (ড.কামাল) সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে দাবি করেন, আরেকদিকে সংবিধান লংঘন করে অনির্বাচিত সরকারের কথা বলছেন। কেন? কী উদ্দেশ্যে? একদিকে নির্বাচন চাইবেন, আরেকদিকে অসাংবিধানিক দাবি তুলবেন- এমন আব্দার কেন?
গতকাল শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় সূচনা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের (দলীয় সকল এমপি) সদস্যদের নিয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকবে। জনগণ এখন বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। দেশে যে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা চলছে, নিশ্চয় জনগণই সেটাকে ধরে রাখবে-দেশবাসীর প্রতি এ আস্থা ও বিশ্বাস আমার রয়েছে। আর এবার ক্ষমতায় আসলে পারলে প্রত্যেকটি গ্রাম শহরে পরিণত হবে।
ড. কামালের নাম উল্লেখ না করে তাঁর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে দাবি করবেন সংবিধান রচয়িতা; অপরদিকে আবার সেই সংবিধানকে লঙ্ঘন করার জন্য নির্বাচনের অন্য ফর্মূলা দিবেন। কার স্বার্থে? কিসের স্বার্থে? সেটাই আমরা বুঝতে চাই। তাদের যদি এত শক্তি থাকে জনগণের সঙ্গে আসবে, ভোট হবে। ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশটা যে সুন্দরভাবে চলছে। দেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে, এটা তাদের ভালো লাগছে না। তারা চায় একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের পরে আমাদের সংবিধান সংশোধন করেছি। বাহাত্তরের সংবিধান ঠিক যেরকম ছিল, যেভাবে নির্বাচনের জন্য যা যা লেখা ছিল আমরা সেভাবেই নিয়ে এসেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার কথা বললাম। এই পদ্ধতি ব্যবহারে তাদের আপত্তি কোথায়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. কামাল) যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত বড় বড় কথা বলছেন, তিনি কার সঙ্গে ঐক্য করলেন? তিনি এতিমের টাকা চুরির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, একুশে গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে নেতা মেনে জোট করলেন!  তাঁর মুখে দুর্নীতির কথা মানায়? তাঁরা সিলেটে গিয়ে জনসভা করলেন, অথচ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করলেন, আমরা নাকি বাধা দেই। কোথায় বাধা দিলাম? আমার নির্দেশ ছিল, যারাই সমাবেশ করতে চাইবে কাউকে বাধা দেওয়া হবে না।
অথচ আমরা বিরোধী দলে থাকতে কথা বলা তো দূরের কথা, একটা মিটিংও করতে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা করে রেখেছি, যাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকে। আর সেই গতি অব্যাহত থাকবে যদি আওয়ামী লীগ আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে। তাহলে মানুষ সুন্দর জীবন পাবে। প্রত্যেকটা গ্রাম শহরে রূপান্তর হবে। ইনশাল্লাহ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীও আমরা উদযাপন করতে পারবো। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আর্ন্তজাতিকভাবেই প্রমাণিত বিএনপি একটি দুর্নীতিবাজ দল। দেশটাকে তারা লুটে খেয়েছিল। দেশের অনেকেই উন্নয়ন চোখে দেখে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না, দেখবেও না। কারণ চোখ থাকতে তারা অন্ধ। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মলগ্ম থেকেই লড়াই সংগ্রাম করেছে। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সফলতা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। এ সংগঠনের শিকড় অনেক গভীরে। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাইলে যে সম্ভব তা প্রমাণ করেছি।
মামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে আমার নামে ১২ টি মামলা দিলো। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিল। আমি কোন মামলাই তুলে নিতে বলিনি। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, প্রত্যেকটি মামলা তদন্ত করতে হবে। কোন মামলায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম। দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। বরং পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কাগজ খুঁজতে গিয়ে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকো কোথায় কোথায় দুর্নীতি করেছে তার প্রমাণ পেয়েছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এই সংসদের আজকেই পার্লামেন্টারি পার্টির শেষ বৈঠক। দেশের মানুষ যদি আবার আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে তাহলে আবার বৈঠক করতো পারবো। তিনি বলেন, উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই চাই। দেশবাসীকে বলবো-উন্নয়নের জন্য গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে যদি দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনেন। আমার বিশ্বাস দেশের জনগণ আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরিচালনায় যৌথসভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এরপর আগামী নির্বাচন, দলের প্রচার কৌশল, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন দলের নীতিনির্ধারক নেতারা।
শিশুরাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবে: পরে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের শিশুরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ এবং আমি আশা করি তারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্ট এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। স্মৃতি ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বেসামরিক ও সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ পটুয়াখালী-বরগুনা যাবেন: পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে পটুয়াখালী আসছেন। তিনি ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ারপ্লান্ট প্রকল্প’ পরিদর্শন করবেন। প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে। সেখানে পুনর্বাসন প্রকল্প ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ উদ্বোধন শেষে পুনর্বাসিতদের মাঝে বরাদ্দকৃত ঘরের চাবি হস্তান্তর করবেন। পরে তিনি বরগুনায় যাবেন।
বরগুনা (উত্তর) প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী বিকালে জেলার তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এসময় ২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page