• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

সংলাপের দুইদিন পরেই ঐক্যফ্রন্টে আন্দোলনের সুর

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৃহস্পতিবার সংলাপে অংশ নেয়ার পরপর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ‘আলোচনা ভালো হয়েছে’, ‘আমরা সন্তুষ্ট নই’, ‘বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি’, ‘আমরা সন্তুষ্ট নই, অসন্তুষ্টও নই’- এরকম নানা কথা বলেছিলেন। তবে দু’দিন পরেই গতকাল শনিবার একমঞ্চ থেকে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো আন্দোলনের সুর। জনগণকে দাবিয়ে রাখার শক্তি কারও নেই: ড. কামাল।
ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-আইইবি মিলনায়তনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, কেউ যেন মনে না করে এদেশের মালিক জনগণ নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না। কেউ যেন মনে না করে যে আমাদের দৃঢ়তা নেই। বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখার শক্তি কারও নেই। বারবার দেখেছি এখানে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। যারা এই চেষ্টা করেছেন তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কেউ এটা অতীতেও পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হওয়া বড় জিনিস নয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কীভাবে নিজেদের আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বাঙালি জাতিকে কেউ পরাজিত করতে পারেনি, পারবেও না। ইয়াহিয়া ও কিসিঞ্জারও বলেছিলেন-বাঙালিরা কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছি।
ড. কামাল প্রধান অতিথি থাকায় কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে যাননি বি. চৌধুরী। এই আলোচনা সভায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দল-জোটের শীর্ষ নেতারা থাকলেও বিএনপির কেউ ছিলেন না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকেও তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্বকারী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে আমি বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বি. চৌধুরীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। গতকাল পর্যন্ত তিনি আসতে রাজিও ছিলেন। আজ সকালেও তাকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু যখন শুনলেন ড. কামাল হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তখন তিনি আর আসতে রাজি হলেন না।’
দাবি আদায়ে যা করা দরকার সব করব: রব
আলোচনা সভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতা  ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা নিয়ে আমরা সংলাপে গিয়েছি। নির্বাচনে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড করার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ও সংসদ বাতিলের দাবি করেছি আমরা। সরকার মানছেন না। জাতি যদি কোনো সংকটের মুখে পড়ে এর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই বহন করতে হবে। জনগণ যখন মাঠে নামে, দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে না। আমরা সিলেটে ও চট্টগ্রামে মাত্র দুটি সমাবেশ করেছি, সেখানে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। আর এতেই আপনারা (সরকার) ভয় পেয়ে গেছেন। সামনে আমরা ঢাকায় সমাবেশ করব। লংমার্চ, রোডমার্চ ও পদযাত্রা হবে। দাবি আদায়ে যা যা করা দরকার সব করব। এ লড়াই গণতন্ত্রের, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এবং সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জয় ছাড়া এবার ঘরে ফিরে যাব না। রব বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন না দিয়ে আবারও জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। নির্বাচন না হলে এর সব দায় প্রধানমন্ত্রীকেই বহন করতে হবে।
ছোটলোকি ব্যাপার: মান্না
জেলহত্যা দিবসের এই আলোচনা সভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার যখন বুঝতে পেরেছে যে মানুষ জেগে উঠেছে, তখন তাতে পানি ঢালতে সরকার সংলাপে বসেছে।  সংলাপে আমরা যে টেবিলে আলোচনায় বসেছি সেখানে স্যুপ-জুস ছিল। একটা রুদ্ধদ্বার বৈঠক। কারও স্যুপ খাওয়ার, কারও জুস খাওয়ার ছবি কীভাবে বাইরে গেছে, এর জবাব চাই। এটা ছোটলোকি কাজ। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করলেন, অথচ আপনার নিজের ঘরেই ডিজটাল নিরাপত্তা নেই। সেখানে তো সাংবাদিকরা ছিলেন না। এর মাধ্যমে সংলাপের গুরুত্বটাই নষ্ট করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সকল গ্রেপ্তার বন্ধ করা হোক। এটা বন্ধ করার জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হয়নি? সংলাপে বললেন মামলার তালিকা দিতে। এই তালিকা দিতে লাগবে এক মাস, প্রধানমন্ত্রীকে পেতে লাগবে আরও এক মাস। এরমধ্যে তারা তফসিল দিয়ে নির্বাচন করে ফেলতে চান। সংলাপের শেষদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাঁড়িয়ে বললেন-গত এক মাসেই শুধু ৬ হাজার গায়েবি মামলা হয়েছে, যেখানে আসামি এক লাখের বেশি। ফখরুল বললেন তার নিজের বিরুদ্ধেই একশ মামলা। মান্না বলেন, সরকারকে বলতে চাই- বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও আমারি ধান, এইবার….। সংলাপে ডেকেছেন যখন দরজা বন্ধ করা যাবে না। আমাদের দাবি ন্যায্য। আমাদের টিম আবারও সংলাপে যাবে। আমরা চাই দাবিগুলোর সমাধান একদিনেই হোক। এর আগে তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।
আজকের দিনটা সময় চাইলেন কাদের সিদ্দিকী
কোন জোটে যাবেন কি যাবেন না-গতকালের এই অনুষ্ঠানে দলীয় সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে বলে আগে বলেছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তবে গতকাল তিনি ড. কামালসহ ফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আর একটা দিন সময় চাই। ৫ তারিখ দলগতভাবে আপনাদের কাছে গিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। একথা বলতে পারি, আমি কখনও জনগণের বিরুদ্ধে যাইনি। আপনাদের সাথে যদি যাই তাহলে জানপ্রাণ দিয়েই কাজ করব। তবে আপনারা যেদিন সংলাপে গেছেন সেইদিনই আপনাদের বিজয় হয়েছে। আপনাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ড. কামাল এখন ঐক্যফ্রন্টের নেতা, তিনি এখন জাতির নেতা। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গোপালগঞ্জুের টুঙ্গিপাড়ায়ও এখন কামাল হোসেন জিততে পারবেন। এতদিন আমি বললাম, সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগ ২০টা আসন পাবে, এখন বলবো ১৯টা পাবে।
অন্যরা যা বললেন
অনুষ্ঠানে কলামিস্ট ও গবেষখ সৈয়দ আবুল মকসুদ ফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সারাজীবন আপোসহীন ছিলেন, এখনও আপোসহীন থেকে জাতরি আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবেন। আমি আশা করি জাতির সংকট সমাধানে আপনারা বিজয়ী হবেন, যেমন আপনারা বিজয়ী হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুর্লাহ চৌধুরী বলেন, এতদিন শুনেছি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। এরপর দেখলাম খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে পতাকা দিয়েছেন, এটা লজ্জার। এখন শুনছি বঙ্গবন্ধু নাকি ‘রাজাকার ড. কামালকে’ মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছেন। তাহলে তো বঙ্গবন্ধুও রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছেন! গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন,  এ সরকারের লাইসেন্স নেই, ফিটনেসও নেই। এটাকে এখন রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এটা কী হিরক রাজার দেশ? রশি ধরে মারো টান, গদি হবে খান খান। এ সরকারের সময় ফুরিয়ে গেছে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ’৭১ এর মতো দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, লুটপাটের ও গণবিরোধী এই শাসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপব ইকবাল সিদ্দিকী।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page