কালিয়াকৈর(গাজীপুর) প্রতিনিধি॥
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার অধিকাংশ আঞ্চলিক সড়কে কার্পেটিং ওঠে খানাখন্দ ও গর্তের কারনে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওই সব সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই সড়কের বেহাল দশার কারণে সড়ক দূর্ঘটনায় পড়ে মানুষের প্রাণ হানির মত ঘটনাও ঘটছে। ওই সব সড়ক সংস্কার কাজের জন্য কালিয়াকৈর এলজিইডি ও সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত ও মৌখিক ভাবে অনুরোধ জানানো হলেও দীর্ঘদিনেও কোন সুরহা করা হচ্ছে না। ফলে আঞ্চলিক সড়কের অবকাঠামো দিন দিন বেসতে যাচ্ছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, সরকার ঢাকা শহরসহ সারা দেশের মহাসড়ক গুলোতে ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করলেও কালিয়াকৈরে আঞ্চলিক সড়ক গুলোতে উন্নয়নে যেন ধীরগতি হচ্ছে। ফলে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের রাস্তায় বেড়িয়ে খানাখন্দ ও কাঁদা পেরিয়ে যাতায়াত করতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বাড়ইপাড়া-চান্দাবহ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থানে খানা খন্দ তৈরি হয়ে এখন যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। প্রায় দুই বৎসর ওই সড়কটি সংস্কার কাজ না করায় ওই এলাকার ২৫টি গ্রামের মানুষ কারখানার শ্রমিক স্কুল/কলেজের ছাত্র/ছাত্রীসহ সকলকে দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।ওই রাস্তার সাথে অবস্থিত ঐতিজ্যবাহী গোসাত্রা ডাঃ জলিলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়।এ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র/ছাত্রী বাড়ই পাড়া,হিজল হাটি,বড়ই ছুটি,খোলাপাড়া,জালশুকা থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করে বাড়ইপাড়া-চান্দাবহ সড়কে সিএনজি অথবা রিক্সায় আবার কেও পায়ে হেটে।
বাড়ইপাড়া-চান্দাবহ সড়কটির শুরুতে নাদভী টেক্সটাইল(গুডনাইট কয়েল)কারখানার সামনে থেকে রাঙ্গামাটি ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং গত এক বৎসর আগেই উঠে গেছে।দুই কিলোমিটার রাস্তার প্রায় অংশেই কার্পেটিং এর নীচে থাকা খোয়ার কোন অস্বিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। মাঝে মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ঐ রোডের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের স্বেচ্ছাশ্রমে বিল্ডিং ভাঙ্গা রাভিস এবং ইটখোলা থেকে আধলা এনে বড় বড় খানা খন্দ মেরামত করে থাকে।
ছাত্র/ছাত্রী,এলাকাবাসী ও যানবাহনের চালকরা জানান, এ সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের অন্তত প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষসহ পার্শ^বতী ধামরাই উপজেলার যাদবপুর,শিমুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে আসছে। এছাড়া চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের যানজট এড়াতে এ সড়কটি প্রায়ই বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার করছে উত্তরবঙ্গের হাজারো যানবাহনের চালকরা। সড়কের পাশদিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিস্কাসনের জন্য কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। গত বর্ষা মৌসুমে অতিবর্ষনের ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তসহ খানা-খন্দের। সৃষ্টি হওয়া ছোট-বড় অসংখ্য গর্তসহ খানা-খন্দে ভরা উচুনীচু সড়ক দিয়ে যানচলাচলে বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমেও দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসিসহ ছাত্র/ছাত্রী,পোষাক কারখানার শ্রমিক,পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের।এখন নিয়মিত বৃষ্টি না হলেও রাস্তার অনেক স্থানে এখনও জমে আছে কাদা ও পানি।
ওই রাস্তার সিএনজির যাত্রী জামাল হোসেন জানান,রাস্তা খারাপ থাকার কারনে সিএনজিতে উঠলে মনে হয় নন্দন পার্কের কোন রাইডে উঠেছি শরীর ব্যথা হয়ে যায় ভাড়াও বেশি দিতে হয়। পশ্চিম খোলাপাড়া সমনআলী সুপার মার্কেটের তরুণ ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম ও সওকত হোসেন জানান, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মালামাল আনা- নেয়ায় পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি এছাড়াও মালামাল পরিবহনে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দিগুন।
এছাড়াও সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির ৩ নম্বর গেট থেকে বিশ^াস পাড়া হাবিব পুর হয়ে বাড়ই পাড়া এনার্জিপ্যাক কারখানার পাশে নবীনগর মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়ক হিসাবে রাস্তাটি অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ন হলেও বিশ^াস পাড়া হাবিব পুর অংশে রাস্তায় খানাখন্দে ভরে গেছে।ওই সব স্থানের কিছু কিছু জায়গায় ইটের সলিং উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।কলকারখানার শ্রমিক ও সাধারন মানুষ ওই রাস্তাদিয়ে রিক্সা নিয়েও চলাচল করতে পারছে না।মালামাল পরিবহনেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারন মানুষকে।
এদিকে সফিপুর- বড়ইবাড়ি সড়কে একই চিত্র দেখা গেছে। এই সড়কটি গত বছর কালিয়াকৈর উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সড়কটি নির্মাণ কাজ তদারকি করলেও বছর দেড়েকের মধ্যে অধিকাংশ স্থান ভেঙ্গে পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে। এতে যানবাহন চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই সড়কের এ বেহাল দশার কারণ উপজেলা এলজিইডির দূর্ণীতিবাজ প্রকৌশলীদের দায়ি করেছেন।
ওই এলাকার আবুল কাশেম জানান, সড়ক নির্মাণের সময় উপজেলা এলজিইডি অফিসের কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়। আর এতে সড়কটি ছয় মাসের মধ্যে ভেঙ্গে বেহাল দশায় পরিণত হয়।
মৌচাক- ফুলবাড়িয়া সড়কের মৌচাক উত্তর ঢালজোড়াসহ ভান্নারা বাজার রেল ক্রসিং এলাকার কয়েকটি স্থানে যেন সড়কটি একটি পুকুরে পরিণত হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী নি¤œমানের থাকায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানা খন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এসড়কটি দিয়ে শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানার যানবাহন ও শ্রমিকদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা এলজিইডি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সরকার মোহাম্মদ সাজ্জাদ কবীর বরাবরের মতই জানান, আমাদের এলজিইডির ওই সব সড়কগুলো সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে।
You cannot copy content of this page