কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি॥
কুড়িগ্রাম পূর্বালী ব্যাংকে হয়রানির অভিযোগ গ্রাহকদের। ব্যাংক কর্মকর্তার অশুলভ আচরণ আর হয়রানিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম। অন্য ব্যাংক নির্ভর হয়ে পড়ছে আমানতকারী। ব্যাংকের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভূক্তভোগীরা।
কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্র ঘোষপাড়ায় অবস্থিত কুড়িগ্রাম জেলা শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। জেলায় ৯টি উপজেলা থাকলেও পূবালী ব্যাংকের মাত্র দুইটি শাখা বিদ্যমান। জেলা সদরে ঘোষপাড়াস্থ প্রধান শাখাটি ব্যতীত অপর শাখাটি ফুলবাড়ী উপজেলা শহরে অবস্থিত। কুড়িগ্রাম শাখায় একটা সময় গ্রাহকদের নিকট ব্যাংকটির সেবামূলক, পেশাদারিত্ব মনোভাবে ঐতিহ্যময়। সর্বোপরি জেলা সদরে ব্যবসা সফল ব্যাংক হিসাবে পূবালী ব্যাংক লিঃ ঈর্ষণীয় অবস্থান বজায় রেখেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ব্যাংকটির সার্বিক কার্যক্রমে সাধারণ আমানতকারী সহ এই ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীগণ চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
ওই ব্যাংকের গ্রাহক জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চাষী আব্দুল করিম অভিযোগ করে বলেন- চলতি বছরের ১৮ই জানুয়ারীতে পূবালী ব্যাংক লিঃ কুড়িগ্রাম শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব মোঃ বেলাল হোসেন গ্রহণ করার পর থেকেই ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ছন্দপতন ঘটে। ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের নিমিত্তে তিনি কুড়িগ্রাম শাখার কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে সুবিধা আদায় করে চলেছেন। ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টধারী সহ কারেন্ট একাউন্ট ও সিসি পার্টিদের প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার ও নাজেহাল হতে হচ্ছে তার হাতে ।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চাষী আব্দুল করিম তাঁর কারেন্ট একাউন্টটি এই ব্যাংকে প্রায় ৩ দশক যাবৎ পরিচালনা করে আসছেন। পূবালী ব্যাংক ভবন সংলগ্ন প্রতিবেশী একজন বিত্তবান ও জেলার শীর্ষ রাজনীতিবিদকে এই ব্যাংকের ম্যানেজার বেলাল হোসেন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে চরম ভাবে অপমান করেন। এ বিষয়ে চাষী করিম আরো বলেন, আমি ভারতে চিকিৎসা জনিত কারণে ব্যাংকে যেয়ে দশ লক্ষ টাকার একটি চেক দেই। আমার জমানো টাকা উত্তোলন নিয়ে ম্যানেজার আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা আমার জন্যে অত্যন্ত অপমানকর ও দুঃখজনক। বিষয়টি কুড়িগ্রামের সর্বমহলে প্রকাশের কারণে আমি বিব্রত। তিনি এই বিষয়ে ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও জনৈক আব্দুল আজিজ একজন এই ব্যাংকের সিসি পার্টি। তিনিও ভারতে চিকিৎসা জনিত কারণে ভিসার জন্যে ব্যাংক স্টেটমেন্টস চাইলে তার সঙ্গেও মারাত্মক খারাপ ব্যবহার করা হয়। ব্যাংক স্টেটমেন্টস প্রদানে বিড়ম্বনার কারণে আব্দুল আজিজ ভিসা পেতে বিলম্ব হয় এবং যথাসময়ে চিকিৎসার জন্যে ভারতে যেতে পারেননি। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ন ম ওবায়দুর রহমান একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পূবালী ব্যাংক লিঃ পুরনো একাউন্টধারী। তাঁর সঙ্গেও অত্র ব্যাংকের ম্যানেজার দুর্ব্যবহার করেছেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম শাহী অত্র শাখার দীর্ঘদিনের সিসি পার্টি। তিনি বর্তমান ম্যানেজার ও শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, এই অবস্থা চললে পূবালী ব্যাংক খুব শীঘ্রই কুড়িগ্রামে মুখ থুবড়ে পড়বে।
অভিযোগ রয়েছে, কুড়িগ্রাম পৌরসভার কর্মচারীগণ পূবালী ব্যাংক লিঃ কুড়িগ্রাম শাখার ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করার অনুরোধ করলে ম্যানেজার তাদের সাথেও দুর্ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, এই ম্যানেজার চরম বদমেজাজি, অহংকারী ও দুর্নীতিবাজ। কুড়িগ্রামে পূবালী ব্যাংক সহ মাত্র দু’টি ব্যাংকে অনলাইন টেন্ডারের ব্যবস্থা বিদ্যমান। অনলাইন টেন্ডারিংয়ে কুড়িগ্রামে নতুন অপর ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ে পুরনো সম্পর্কের কারণে পূবালী ব্যাংকের অত্র শাখায় অধিকাংশ ঠিকাদাররা ব্যাংকে ভীড় করেন। এই সুযোগে ম্যানেজার ব্যাংকের অসৎ কিছু কর্মচারীর মাধ্যমে ই-টেন্ডারিংয়ের জন্যে উৎকোচ নিয়ে থাকেন। বিনিময়ে টেন্ডার ঠিকাদারগণকে টেন্ডার সাবমিটের আগ পিছের সুযোগ দিয়ে থাকেন।
অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমে অত্র ব্যাংকে কোন ফোন আসলে সময়মত কল রিসিভ না করার কারণে সারাদেশের ব্যাংকের গ্রাহকগণ যথেষ্ট বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ব্যাংকে টাকা জমাদানের পরে যথা সময়ে পোস্টিং না দেয়ার কারণে জরুরী প্রয়োজনে গ্রাহকগণ সঠিক সময়ে অনলাইনে টাকা তুলতে পারেন না। এ ব্যাপারে একজন অভিযোগ করে জানালেন যে দুপুর ১২টার আগেই আমার একাউন্টে টাকা জমা দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যাংকিং আওয়ার শেষে ৪.১৩ মিনিটে পোস্টিং দেয়। এই বিষয়ে রংপুর এ আঞ্চলিক ম্যানেজারকে তথ্য প্রমান সহ অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
আরো জানা যায় , সিসি লোন, এসইমি লোন বিষয়ে যে কোন লোন স্যাংশনের বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ দাবি করেন। ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হয়ে গ্রাহকগণ এই ব্যাংক থেকে একাউন্ট উইথড্র শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে ম্যানেজার বেলাল হোসেন তার সম্পর্কে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি চলতি বছরের টার্গেট ৩ মাস পূর্বেই এচিভ করেছি সুতরাং এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ম্যানেজার বেলাল হোসেনের অত্র শাখায় ব্যাংকিং কার্যক্রম উন্নতির প্রমান পাওয়া যায়নি। বিগত সময়ের ম্যানেজারগণের টিমওয়াকের্র কারণে বর্তমান এই এচিভমেন্ট হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অত্র ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন।
ম্যানেজার বেলাল হোসেনের এই অবাঞ্চিত অব্যাংকিং সুলভ আচরণের কারণ হিসাবে জানা যায়, তিনি পূবালী ব্যাংক লিঃ রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক ম্যানেজার কামরুজ্জামান ডিজিএম এর অতি প্রিয়ভাজন ব্যক্তি।
You cannot copy content of this page