• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনে মারা যাচ্ছে গর্ভের সন্তান

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮

এবার নতুন এক অনুসন্ধান নিয়ে হাজির হয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নারীদের গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কারণ হিসেবে বলছেন, মাটিতে বাড়ছে লবণাক্ততার পরিমাণ। ফসল নষ্ট হচ্ছে, মরে যাচ্ছে মিঠা পানির মাছ, কমে যাচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি। সেই লবণাক্ত পানি পানের কারণেই বাড়ছে রোগ আর গর্ভের সন্তান মৃত্যুর ঝুঁকি। এর প্রভাব পড়ছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়ও। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলতে আপাত দৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি সামনে আসলেও এর প্রভাবের পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।

সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় একটি ছোট গ্রামে নারীদের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করেন গবেষকরা। শুরু হয় অনুসন্ধান। তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এর জন্য দায়ী মূলত জলবায়ুর পরিবর্তন। এরপর সেখানে অনুসন্ধানে যান বিবিসি’র সাংবাদিক সুজানাহ স্যাভেজও।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পূর্ব উপকূলে ছোট একটি গ্রামে বাস করেন আলমুন নাহার। ও তার তিন পুত্রসন্তান। তবু কন্যাসন্তানের আশায় আবারও গর্ভধারণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গর্ভেই মারা যায় তার সন্তান। তবে গ্রামটিতে এমন ঘটনা এখন আর নতুন নয়। বিজ্ঞানীরা খেয়াল করেন পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামের চেয়ে গর্ভে সন্তান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি এখানে অনেক বেশি। আর এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন তারা।

আইসিডিবিআরবি-এর বিজ্ঞানী ড. মানজুর হানিফি বলেন, এটা জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রভাব। জমিতে এর পরিবর্তন দেখা যায়, কিন্তু মানবদেহে এর প্রভাব দৃশ্যমান না। বিগত ৩০ বছর ধরে কক্সবাজারের নিকটবর্তী চকরিয়ায় বেশকয়েকটি এলাকায় স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে আইসিডিডিআরবি। ফলে একদম ছোটখাটো পরিবর্তনও তাদের নজরে এসেছে।

আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে যারা সমুদ্র থেকে দূরে থাকেন তাদের বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাহাড় ও সমতল অঞ্চলের ১২ হাজার ৮৬৭ জন গর্ভবতী নারীকে পর্যবেক্ষণ করেছে আইসিডিডিআরবি।

অনুসন্ধানে তারা দেখতে পান, যারা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কিংবা ৭ মিটার উচ্চতায় থাকে, দূরবর্তী অঞ্চল থেকে তাদের গর্ভে সন্তান মারা যাওয়ার হার ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি। ড. হানিফি বলেন, পার্থক্য হয়তো খুব বেশি না। কিন্তু এই সন্তান মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।

এ ছাড়া, চকরিয়া থেকে মতলব অঞ্চল পর্যন্ত আইসিডিডিআরবির পর্যবেক্ষণে থাকা এলাকাগুলোতেও এই পার্থক্য স্পষ্ট। গর্ভে থাকা শিশু মৃত্যুর হার চকরিয়ায় ১১ শতাংশ আর মতলবে ৮। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই পার্থক্যের মূল কারণ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। আর সেটার জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page